হোম > ছাপা সংস্করণ

দল ভারী করার চিন্তায় বিএনপি

রেজা করিম, ঢাকা

সরকার পতনের একক আন্দোলন গড়ে তোলার সব চেষ্টাতেই ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। সমমনা ও গণতন্ত্রকামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগও বারবার হোঁচট খেয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপির প্রস্তাবিত ‘জাতীয় সরকার’-এর ফর্মুলা দেশীয় রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

তবে বিএনপির এই ফর্মুলার কার্যকারিতা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পাশাপাশি দলটির পক্ষে-বিপক্ষের রাজনীতিকেরাও প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকি দলের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে কথা উঠেছে। বলা হচ্ছে, দল ভারী করার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে অনেকটা বাধ্য হয়েই এই ফর্মুলা হাজির করেছে বিএনপি।

দেশের বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকেও জাতীয় সরকার গঠনের তাগিদ দেওয়া হচ্ছিল অনেক আগে থেকেই। বরাবরই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে বিএনপি। তবে গত সোমবার যুক্তরাজ্যে এক আলোচনা সভায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের পর থেকে এই দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়। ওই সভায় জাতীয় সরকারের ফর্মুলার কথা বলেন তারেক। পরের দিন মঙ্গলবার দলের স্থায়ী কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পর থেকে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলছে দলটি।

দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। তবে সেটা নির্বাচনের আগে নয়। বর্তমান সরকার সরে যাওয়ার পর একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরে সরকার গঠনের সুযোগ তৈরি হলে জাতীয় সরকার গঠন করবে দলটি। যেখানে বিএনপিসহ অন্য দলগুলোরও অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে।

বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা নির্বাচন চাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার পর যারা আন্দোলন করেছে, তাদের নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করব। এটা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন।’

তবে বিএনপির এই প্রস্তাব নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে তাদের মিত্র ও সমমনা দলগুলো। দেশীয় রাজনৈতিক বাস্তবতায় নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাবকে আস্থায় নিতে পারছে না তারা। নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে বিএনপির প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে তাদের।

সমমনা দলগুলোর বেশির ভাগ নেতাই মনে করেন, ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এখন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের আর তর সইছে না। তারা এরই মধ্যে নানাভাবে চেষ্টা করেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতা পায়নি। আবার জোট গঠনের উদ্যোগ নিলেও দলে এবং জোটে হতাশা দেখা দেয়। যে কারণে কূল-কিনারা না পেয়ে তারা এখন জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছে।

নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তারা (বিএনপি) ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয় যেমন, এই রকম পরেরটা আগেই দিল। এখন যে রকম করে তারা বলছে যারা জিতবেন, তাদের নিয়ে, আবার যারা জিতবেন না, তাদের নিয়েও সরকার করব। তার মানে আগে থেকেই লোভ দেখানো হচ্ছে যে, আমরাই ক্ষমতায় যাব এবং আপনাদের নিয়ে সরকার গঠন করব। তারা কি বুঝে এগুলো বলছে, আমার কাছে ঠিক স্পষ্ট না।’

তবে নির্বাচনের পরে বিএনপির দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলেও জোটভুক্ত দলগুলোর অনেক নেতা জাতীয় সরকারের প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২০-দলীয় জোটভুক্ত একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, ‘এগুলো কিছুই না। ক্ষমতায় গেলে বিএনপি এসব বেমালুম ভুলে যাবে। আসলে সরকার পতনের আন্দোলনকে বেগবান করতে বিএনপি এটা একটা কৌশল নিয়েছে। এরপরেও চাইব রাজপথে একটা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হোক, এই সরকারের পতন হোক।’

বিএনপির প্রস্তাবের বিষয়ে পর্যবেক্ষণের কথা জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল যখন নির্বাচন-পরবর্তী জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলে, তখন সেটা নিশ্চয়ই বড় আলোচনার জন্ম দেবে। আমাদের দলে আমরা এটা পর্যবেক্ষণ করছি। এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশে রাজনৈতিক নতুন বন্দোবস্তের জন্য জাতীয় ঐকমত্য দরকার। তবে বিএনপির প্রস্তাব কি উদ্দেশ্যে, তা পরিষ্কার হলে এই বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’

বিএনপির জাতীয় সরকারের প্রস্তাব প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় সরকার তখনই হয়, যখন দেশ এমন কোনো বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যে, তখন এককভাবে কারও পক্ষে ওই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাঁদের মতে, দেশে সে রকম অবস্থা তৈরি হয়নি। বিএনপিও জনগণকে সে রকম কোনো জায়গায় ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। এই বাস্তবতায় এমন ফর্মুলা নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছেন তাঁরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পরেও দলীয় সরকারের পরিবর্তে জাতীয় সরকার গঠনে এমন একটি প্রস্তাব আসে। সেটা তখনো হয় নাই। আমার জানামতে আরও বেশ কয়েকবার বিভিন্ন সংকটকালে এই সরকারের ফর্মুলা সামনে আসে। আমার মনে হয় না এবারও এটা কার্যকর হবে।’

তবে জাতীয় সরকার বিষয়ে বিএনপির প্রস্তাব নিয়ে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সন্দেহকে উড়িয়ে দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘হয় নাই বলে যে হবে না, তা তো না। অতীতে যা হয় নাই, এখন তো তাই হচ্ছে। সরকারের জুলুম-নির্যাতন তো এখনকার মতো আগে কখনো হয় নাই। কাজেই এটাকে সহজভাবে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন যেন করতে পারি, সেই লক্ষ্যে সামনে এগোতে হবে।’

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ