বলা হয়, সে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে খেলোয়াড়। ইউরোপের শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে ৫৩ মিনিট খেলার রেকর্ড আছে তাঁর। কিন্তু সেই অল্প সময়ের মধ্যে ফাঁস হয়ে যায় তাঁর সব জোচ্চুরি। এই ফুটবলার হচ্ছেন সেনেগালের আলি দিয়া।
সেনেগালের প্রথম আফ্রিকা কাপ অব নেশনস জেতার আগে কেউ কেউ মনে করেছেন দিয়ার কথাও। ফুটবল মঞ্চে সেনেগাল পরিচিত হওয়ার আগেই এই দেশকে আলোচনায় নিয়ে এসেছিলেন দিয়া। তবে তাঁর গল্প যতটা প্রতারণার, ততটাই মজার আর স্বপ্ন পূরণের।
ফ্রান্স ও জার্মানিতে নিচের সারির ক্লাবে খেলে ক্যারিয়ার শুরু করেন দিয়া। তবে তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন প্রিমিয়ার লিগে খেলার। গিলিংহাম ও এএফসি ব্রুনমাউথের হয়ে ট্রায়ালও দিয়েছিলেন। তবে তাঁর পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হতে পারেনি দলগুলো। যোগ দেন নন-লিগ ক্লাব ব্লাইথ স্পোর্টসে। যেখানে বদলি হিসেবে শুধু একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান দিয়া।
কদিন পরই আকস্মিক এক পরিবর্তন ঘটে দিয়ার ক্যারিয়ারে। ১৯৯৬ সালে তাঁকে দলে টেনে নেয় সাউদাম্পটন। তেমন কোনো পরিচিত কিংবা খেলোয়াড়ি দক্ষতার নিদর্শন না থাকলেও দিয়াকে দলে টানার পেছনে ছিল অদ্ভুত এক ফোন কল। দিয়াকে দলে নিতে সাউদাম্পটন ম্যানেজার গ্রায়েম সাউনেসকে ফোন করেন লাইবেরিয়ার কিংবদন্তি ফুটবলার ও ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার জেতা জর্জ উইয়াহ। উইয়াহ সাউনেসকে ফোন দিয়ে জানান, দিয়া তাঁর জ্ঞাতি ভাই।
এমনভাবে দিয়াকে উপস্থাপন করা হয় যেন তিনি আফ্রিকার একজন তারকা। উইয়াহর সেই ফোন পেয়েই দিয়াকে এক মাসের চুক্তিতে দলে নেন সাউদাম্পটন কোচ। কিন্তু অনুশীলনে দিয়ার খেলা এতটাই বাজে ছিল, বাকি খেলোয়াড়েরা যারপরনাই বিস্মিত!
৩৩ নম্বর জার্সি পরে সাউদাম্পটনের হয়ে একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান দিয়া। সেই ম্যাচে সাউদাম্পটনের প্রতিপক্ষ ছিল লিডস ইউনাইটেড।
সাউদাম্পটনের বিপক্ষে ম্যাচে ম্যাথিউ লে টিসিয়ের চোটে পড়লে ৩২ মিনিটে মাঠে নামেন দিয়া। কিন্তু মাঠে তাঁর খেলা এতটাই বাজে ছিল যে, ৮৫ মিনিটেই দিয়াকে তুলে নেন সাউনেস। ম্যাচে তাঁর খেলা দেখে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন সাউনেস ও খেলোয়াড়েরা। যাঁর জায়গায় দিয়া মাঠে নামেন সেই টিসিয়ের বলেছিলেন, ‘তাঁর খেলা দেখা ছিল খুবই বিব্রতকর একটা ব্যাপার।’
এই ম্যাচের পর উধাও হয়ে যান দিয়া। ব্যাখ্যা চাইতে যোগাযোগ করা হয় উইয়াহর সঙ্গে। কিন্তু হতভম্ব উইয়াহ বলেন, এই নামে তাঁর কোনো ভাই-ই নেই! এমনকি তিনি কোনো ফোনো করেননি।
মূলত প্রতারণার আশ্রয় নিয়েই সাউদাম্পটনে আসেন দিয়া। শুধু এটুকুই নয়, দিয়া তাঁর বয়সও লুকান। সে একজন অর্থনীতির ছাত্র, যাঁর স্বপ্ন ছিল প্রিমিয়ার লিগে খেলার। তাঁর এক বন্ধু উইয়াহ সেজে সাউনেসকে ফোন করেছিলেন।
মাত্র ৫৩ মিনিট ফুটবল খেলে দ্য টাইমসের প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে বাজে ৫০ খেলোয়াড়ের তালিকায় শীর্ষ স্থানে আছেন দিয়া। ইএসপিএনের করা প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে বাজে ৫০ দলবদলের তালিকাতেও শীর্ষেও তিনি।