মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাংলাবাজার ফেরিঘাটে ঢাকাগামী যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না। মাত্র ১০ ঘণ্টায় শুধু ৪টি ফেরি দিয়ে পদ্মা পারাপারকে প্রহসন হিসেবে অভিহিত করছেন চালক ও যাত্রীরা। বিকেল সাড়ে ৪টায় সবশেষ ফেরিতে উঠতে না পেরে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ফেরি ঘাটেই আটকে পড়ছে। ফলে ফেরি চলাচল করলেও দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।
যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ, দূরবর্তী জেলা থেকে আসা ছোট যানবাহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অপেক্ষা করে বিকেলে যখন ফেরিতে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছে তখন বিকল্প নৌপথে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। রাতে ঘাটের টার্মিনালে থাকতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ সব গাড়ির চালক ও যাত্রীদের। গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও ফেরিতে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছে। জরুরি অবস্থায় দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ছুটতে হচ্ছে তাঁদের।
প্রাইভেটকারের চালকেরা অভিযোগ করেন, ঘাটের পুলিশ-আনসার সদস্যরা উৎকোচ নিয়ে সিরিয়াল ভেঙে দিনের বিভিন্ন সময়ে ফেরিতে গাড়ি ওঠায়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাবাজার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশের কোনো সদস্য অনৈতিক কাজে জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নৌপথে ফেরি সংখ্যা এবং সময় না বাড়ানো হলে দুর্ভোগ দূর হবে না। সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সব যাত্রীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ প্রতিদিন যে পরিমাণ মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স ঘাটে আসে, তাতে শতাধিক যানবাহন ফেরিতে উঠতে ব্যর্থ হয়। ভোর থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শত শত গাড়ির ভিড় থাকে ঘাটে। ফেরিতে ওঠার রাস্তা গাড়িতে ব্লক হয়ে যায়। জরুরি অ্যাম্বুলেন্সও তখন ফেরিতে ওঠানোর সুযোগ থাকে না। ফেরির সংখ্যা বাড়িয়ে রাতেও চলাচল শুরু না হলে এই দুর্ভোগ প্রকট আকার ধারণ করবে।’
বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে স্রোতের তীব্রতার কারণে পদ্মাসেতুর পিলারে একাধিকবার ফেরির ধাক্কা লাগে। এরপর থেকেই ফেরি চলাচল ব্যাহত হতে থাকে। দুর্ঘটনা এড়াতে গত ১৮ আগস্ট ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। এরপর টানা ৪৭ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৫ অক্টোবর সীমিত আকারে ফেরি চালু হয়। মাত্র ৬ দিন চলার পর স্রোত বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে আবারও ফেরি বন্ধ রাখেন কর্তৃপক্ষ। টানা ২৮ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৮ নভেম্বর থেকে পুনরায় ফেরি চালু হয় বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে। তবে সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাত্র ৪টি ফেরি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভারী যানবাহন পারাপার বন্ধ রেখে শুধু হালকা যানবাহন পার করা হয়।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফেরি চালুর পর এই নৌপথে ব্যবহারকারীদের মনে আশার সঞ্চার হলেও কিছুদিন যেতেই দুর্ভোগের শিকার হতে থাকে যাত্রীরা। প্রতিদিন অসংখ্য ছোট যানবাহন ঘাটে এলেও ফেরির স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত সংখ্যক যানবাহন ফেরি পারাপার হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছে ঘাট থেকে।’
অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. জহির বলেন, ‘জরুরি রোগী নিয়ে ঘাটে এসে অপেক্ষা করেও ফেরিতে উঠতে পারিনি। এদিকে অনেকে ‘ম্যানেজ’ করে ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। কীভাবে উঠছে তা কেউ বলেনও না। তবে এই ঘাটে গাড়ির সংখ্যা প্রচুর। সে তুলনায় ফেরি নেই। একটি ফেরি ছেড়ে গেলে আরেকটি আসতে অনেক সময় লাগে। এদিকে বিকেল সাড়ে ৪টায় ফেরি বন্ধ। সব মিলিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই। রাতে ফেরি চললে এই সমস্যা থাকত না।’
বিআইডব্লিউটিসি’র বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ফেরি চলছে। চলাচলে সময় এবং ফেরি সংখ্যা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। হবে কি না তাও জানা নেই। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বিষয়টি।’