চলতি জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখ। সময় সন্ধ্যা বেলা। বান্দরবান-রোয়াছড়ি সড়কের হানসামাপাড়া এলাকায় নোয়াপতং খালের ওপর নির্মিত বেইলি সেতুটি পার হচ্ছিল রোয়াংছড়িগামী একটি বালুবোঝাই ট্রাক। ঠিক ওই সময়েই সেতুর তিনটি পাটাতন খুলে পড়ে যায়। এতে ট্রাকটি কোনোরকমে রক্ষা পেলেও প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর বন্ধ থাকে যান চলাচল। পরে পাটাতন ঝালাই (ওয়েল্ডিং) করে চলাচলের জন্য বেইলি সেতুটি পুনরায় খুলে দেয় সড়ক বিভাগ।
শুধু নোয়াপতং খালের এই সেতু নয়, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে এ রকম নড়বড়ে বেইলি সেতুর সংখ্যা অর্ধশতাধিক। যানবাহন উঠলে কাঁপতে থাকা এসব সেতু যেন একেকটা মরণফাঁদ। সেতুগুলো এতটাই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ যে, নিচে আলাদাভাবে লোহার পাইপ ও পাশে বালুর বস্তা দিয়ে কোনোমতে চালু রাখা হয়েছে যান চলাচল। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে সেখানে। হতে পারে প্রাণহানি।
জানা গেছে, বান্দরবান সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতায় জেলার অভ্যন্তরে ৮টি সড়ক রয়েছে। এসব সড়কে বর্তমানে ১৫৯টি বেইলি সেতু রয়েছে, যার ৭৬টিই সড়ক বিভাগের নির্মাণ করা। সড়ক বিভাগের এসব বেইলি সেতুর মধ্যে ১২টি পাকা গার্ডার সেতু হিসেবে রূপান্তর করা হচ্ছে। বাকি ৬৪টি বেইলি সেতু চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এর মধ্যে চকরিয়া-লামা-ফাঁসিয়াখালী-আলীকদম সড়কের ইয়াংছা এলাকার বেইলি সেতু এবং লামা-আলীকদম বেইলি সেতু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যান চলাচল চালু রাখতে সেতুর খুঁটির পাশাপাশি আলাদাভাবে পাইপ ও বালুর বস্তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেকোনো সময় সেতুগুলো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বান্দরবান সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শরীফুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও পাকা গার্ডার সেতু না হওয়ায় বেইলি সেতুগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। সড়ক বিভাগ তাই প্রতিটি সেতুর দুই পাড়েই ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, সর্বোচ্চ ৫ টন মালামাল গাড়িতে পরিবহন করা যাবে’—এমন বিজ্ঞপ্তিসংবলিত সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ সময় সড়ক বিভাগের লাগানো এসব বিজ্ঞপ্তি মানেন না যানবাহনের চালকেরা। তাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো দিয়ে ৫ টনের অধিক পণ্যবাহী গাড়ি চালান। ফলে সেতুগুলো আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
জানতে চাইলে বান্দরবান সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সড়ক বিভাগের আওতায় থাকা ৭৬টি বেইলি সেতুকে পাকা গার্ডার সেতুতে পরিণত করার কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি সেতু পাকাকরণের কাজ শেষ পর্যায়ে।