বা অতিব্যবহারে অনেক কিছুরই ধার কমে কিংবা মরচে পড়ে। অথচ যুগ যুগ ধরে ব্যবহারের পরও এই প্রবচনটি কমজোরি না হয়ে যেন দিনকে দিন ক্রমাগত আরও উজ্জ্বল ও ধারালো হয়ে উঠেছে। কড়ি এবং তেল দুটোই এখন ইচ্ছাপূরণের সহায়ক শক্তি হয়ে উঠেছে। কড়ি বা টাকা থাকলে অথবা তেল দেওয়ার অভ্যাস না থাকলে পদে পদে নাকাল হতে হয়। পকেট ভরা কড়ি এবং তেলবাজির স্বভাব থাকলে আর কী চাই!
এই ভূমিকাটুকু করতে হলো আজকের পত্রিকার অনলাইনে একটি খবর পড়ে। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পেয়ার মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগ টাকা ছাড়া কোনো ফাইলেই হাত দেন না তিনি। রীতিমতো খাতা-কলমে হিসাব কষে নিজের ‘পার্সেন্টেজ’ আদায় করেন। চাহিদামতো টাকা না দিলে ফাইল আটকে রেখে অসদাচরণ, হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিভাগীয় ও জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন। এ নিয়ে উপজেলার শিক্ষক, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, পেনশনভোগী কর্মচারীর সঙ্গে ঝামেলাও হয়েছে। গত বছর ১৩ জুন বাঘাইছড়ি উপজেলায় হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের দায়িত্ব নেন পেয়ার মোহাম্মদ। এর আগের কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থানের সময়ও তাঁর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ছিল।
বাঘাইছড়ি উপজেলায় কর্মরত অনেকেই এই হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরাসরি গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন। প্রশ্ন হলো, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ‘ঘুষ-বাণিজ্য’ অব্যাহত রাখতে পারছেন কীভাবে? তাঁর ক্ষমতার উৎস কী? পেছনে খুঁটির জোর না থাকলে একজন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পক্ষে এভাবে ‘পার্সেন্টেজ’ আদায় করা সম্ভব? বিভাগীয় ও জেলা কর্মকর্তাদের নাম যে তিনি ব্যবহার করেন, তা কি মিছেমিছি? তিনি সত্য বললে তাঁকে বলির পাঁঠা বানিয়ে অবশ্য কোনো লাভ নেই।
দিনের পর দিন প্রকাশ্যে বাছবিচার না করে ঘুষ দাবি করার পরও পেয়ার মোহাম্মদ চাকরিতে বহাল থাকেন কী করে? সরকারি চাকুরেদের বিরুদ্ধে ঘুষ বা অন্য কোনো অসদাচরণের অভিযোগ পেলে তা উপেক্ষা না করে কিংবা ধামাচাপা না দিয়ে সঠিক তদন্ত শেষে শাস্তির ব্যবস্থা না করলে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা যাবে না।
বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা বলেছেন, ‘শুধু হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাই নয়, উপজেলায় এমন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আরও আছেন। উপজেলা পরিষদ আইনের দুর্বলতার কারণে এসব অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’
বাঘাইছড়ির ইউএনও শরিফুল ইসলামও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পেয়ার মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। সরকারি চাকরিবিধিতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই? প্রচলিত আইনে দুর্বলতা চিহ্নিত হয়ে থাকলে তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয় না কেন? মূল সমস্যাকে চিহ্নিত করা না হলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এভাবে খবরের শিরোনাম হবেন, কিন্তু লজ্জা পাবেন না একটুও! শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ জনগণ।