গত শতকের চল্লিশের দশক থেকে আশির দশকের শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন শিবিরে বিরাজমান স্নায়ুযুদ্ধের নতুন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তবে এবার নেতৃত্ব বদলে যাচ্ছে। রাশিয়ার জায়গায় নেতৃত্বে আসছে চীন। তাই সংগত কারণে ইউরোপের বদলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে পূর্ব এশিয়া, গত স্নায়ুযুদ্ধে যা এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।
হংকংভিত্তিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের বিশ্লেষক মিংচিং পে লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে বিকাশমান নতুন স্নায়ুযুদ্ধে বিশ্বের ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তার জন্য পূর্ব এশিয়াকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ইউরোপের চেয়ে এ অঞ্চল নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর ফলে দুই ধরনের বিষয় ঘটছে। প্রথমত, এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো শত্রুরা পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ ইরানের কথা বলা যায়। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি (জেসিপিএ) নতুন করে শুরুর আলোচনা চলছে। এতে দৃঢ়ভাবে দর-কষাকষি করছে ইরান। উদ্ভূত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশটি এমনটি পারছে।
এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মিংচিং আফগানিস্তান, ইসরায়েল ও গালফ অঞ্চলের প্রসঙ্গ টানেন। আগস্টে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের আগে চলতি শতাব্দীতে চীনকেই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন জো বাইডেন। এরপর থেকে তাইওয়ান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের কৌশল বিস্তার করছে ওয়াশিংটন। এর ফলে ওই অঞ্চলে অন্য ধরনের সমীকরণ হচ্ছে। যেমন, গালফ দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়াচ্ছে ইসরায়েল।
দ্বিতীয়ত, ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ ফিরিয়ে নেওয়ার ফল ঘরে তুলতে চেষ্টা করছে রাশিয়া। ইউক্রেন সেই ধারাবাহিকতার অংশ। ইউরোপে নিজেদের স্বার্থ কমেছে, এমন হিসাব থেকে সেখানে নিরাপত্তা বা সামরিক ব্যয় বাড়াতে চাইছে না পেন্টাগন। আর এ সুযোগে নিজেদের নিরাপত্তার জোরদার করতে চাইছে রাশিয়া।
এ উদ্দেশে জেনেভায় গত সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু হয়েছে। উচ্চপর্যায়ের কূটনীতিকদের এ আলোচনায় দেশ দুটি কে কাকে, কতটুকু ছাড় দেবে, মূলত সে বিষয়েই সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
আসন্ন স্নায়ুযুদ্ধ বিশ্বের একেক অঞ্চলে একেক ধরনের ফল তৈরি করবে। বিশ্বের আঞ্চলিক শক্তিগুলো নিজেদের প্রতিবেশীদের ওপর খবরদারি বাড়াবে। লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক বা প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিযোগিতা অন্য মাত্রায় প্রবেশ করবে।