‘বাবা পুলিশ আমার কাছে ১ লাখ টাকা চেয়েছে। টাকা দিলে ছেড়ে দেবে, না দিলে আমাকে ও আমার মেয়েকে জেলে পাঠিয়ে দেবে।’ কথাগুলো মারা যাওয়ার আগে গত শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে হিমাংশু বর্মণ বলেছিলেন—দাবি বাবা বিসেশ্বর বর্মণের।
এর আগে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের পূর্ব কাদমা মালদাপাড়া থেকে শুক্রবার সকালে হিমাংশুর স্ত্রী সবিতার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় হিমাংশুসহ তাঁর এক মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশি নির্যাতনে হিমাংশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, হিমাংশু আত্মহত্যা করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হিরণ্ময় বর্মণ বলেন, ‘হিমাংশুকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনে পুলিশ। তাঁর গলায় একটি দাগ রয়েছে।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে হিমাংশুর স্ত্রী সবিতা নিজ বাড়িতে খুন হন। ওই সময় আশপাশের লোকজন হিমাংশুকে তাঁর স্ত্রীর মরদেহের পাশে দেখতে পান। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাতীবান্ধা থানা-পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। একপর্যায়ে ওই লাশসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হিমাংশু ও তাঁর এক মেয়েকে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর হিমাংশু মারা যাওয়ায় এলাকার অনেকে সমালোচনা করছেন।
এ বিষয়ে নিহতের বাবা বিসেশ্বর বর্মণ বলেন, ‘শুক্রবার দুপুরে ছেলেকে থানায় দেখতে গেলে পুলিশ তাঁর কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে পারলে ছেলে ও নাতনিকে ছেড়ে দেওয়া হবে, না হলে তাঁদের জেলে পাঠানো হবে বলে জানায়।’
তবে টাকা চাওয়ার বিষয়টা ভিত্তিহীন বলে দাবি করে হাতীবান্ধা থানার ওসি এরশাদুল আলম বলেন, ‘হিমাংশু থানাকক্ষে থাকা ওয়াই-ফাইয়ের তার গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য লালমনিরহাটের সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে হিমাংশুর মৃত্যুর ঘটনায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি সুলতানা কামাল তীব্র ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এই ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।