বাংলা লোকনাট্য উৎসব। সে জন্য পুঠিয়া রাজবাড়ির সামনে মঞ্চ। প্রতিবারের মতো মঞ্চের ডান পাশে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রয়েছে বঙ্গবন্ধু, লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ইসলামের ছবির সারি। এই সারিতে এবার একটি নতুন ছবি যুক্ত হয়েছে। ছবিটি লোকনাট্য গবেষক কাজী সাঈদ হোসেন দুলালের। মানুষটি ছিলেন এই উৎসবের প্রাণপুরুষ। তিনি এখন আর নেই। এ কারণেই ১৬ বছর পর এই উৎসবের নাম হয়ে গেল ‘১৭তম দুলাল বাংলা লোকনাট্য উৎসব।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে পুঠিয়া থিয়েটারের উদ্যোগে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী এ বাংলা লোকনাট্য উৎসব। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ভারতীয় হাইকমিশন এ আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। বিকেলে লাঠিখেলা, মাদারের গান, আলকাপ গান, বাংলা বাদ্য ও আদিবাসী নৃত্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। কিন্তু উৎসবজুড়েই যেন শোকের আবহ। অতিথিদের সবার বক্তব্যের মধ্যেই ছিল কাজী সাইদ হোসেন দুলালের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, শোক প্রকাশ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান।
সন্ধ্যায় ৭টায় রাজবাড়ির সামনে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। তার আগেই বিকেল সাড়ে ৩টায় কাজী সাইদ হোসেন দুলালের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিকেল ৫টায় বের করা হয় একটি শোভাযাত্রা। উৎসবে লাঠিখেলার দল এসেছিল পুঠিয়ার শাহাবাজপুর থেকে। রাজশাহীর তানোর থেকে আদিবাসী নৃত্য নিয়ে এসেছিল রাতৈল বাহা শিশু সাঁওতাল সংঘ। আলকাপ রঙ্গরস গ্রাম থিয়েটারও এসেছিল তানোর থেকে। বাউল দল ও বাংলা বাদ্য দল এসেছিল পুঠিয়া থেকেই।
সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বলনের পর শুরু হয় আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জিব কুমার ভাটি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পণ্ডিত, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান ও গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না।
এ উৎসবে প্রতিবছর দুজন নাট্যব্যক্তিত্বকে সেলিম আল দীন পদক দেওয়া হয়। এবার নাট্যব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেন ও আমিরুল ইসলামকে এ পদক দেওয়া হয়। কাজী সাইদ হোসেন দুলালের স্ত্রী নাজমাতুন নাহার আমিরুল ইসলামের হাতে এ পদক তুলে দেন। আগামী ১২ মার্চ এ পদক লোকসংস্কৃতি গবেষক সাইমন জাকারিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হবে।