কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের বড়ইতলা গ্রাম। লেভেল ক্রসিংয়ের পাশে রয়েছে একটি স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৩ অক্টোবর সকালে এই গ্রামেই হানা দেয় পাকিস্তানি সেনারা। দলছুট এক সৈন্যকে হত্যার গুজব রটিয়ে সেদিন ৩৬৫ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। তাঁদের স্মৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসেন বড়ইতলা গ্রামেরই দুজন। তাঁরা হলেন আবদুর রহিম ও তাঁর ছেলে মো. মর্তুজ আলী মস্তফা। তাঁদের দান করা ১৭ শতক জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে এই স্মৃতিসৌধ। তা ছাড়া সেখানে রয়েছে সেদিন নৃশংস হত্যার শিকার নিরীহ মানুষদের নামফলক; এলাকাবাসীর দাবি, তাঁদের শহীদের মর্যাদা দেওয়া হোক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, জমিদাতা মো. মর্তুজ আলী মস্তফা একজন কৃষক। তিনি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য ১৯৯৬ সালে প্রশাসনকে দান করেন ১৫ শতক জমি। এর আগে ১৯৭২ সালে তাঁর বাবা আবদুর রহিম দান করেন দুই শতক জায়গা। পরে ১৭ শতক জায়গার ওপর নির্মাণ করা হয় স্মৃতিসৌধ ও নামফলক।
জানতে চাইলে মর্তুজ আলী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। তিনি তখন স্থানীয় সিরাজুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। তবে তাঁর বাবার কাছেই শুনেছিলেন পাকিস্তানি সেনাদের সেদিনের বর্বরতার কথা। গ্রামের নিরীহ মানুষদের নির্যাতন করে ও গুলি মেরে হত্যা করা হয়। এতগুলো মানুষের আত্মাহুতির স্মৃতি তাঁর বাবা ও তিনি ধরে রাখতে চান। এ জন্য জমি দান করেছেন। এখানে তাঁর কোনো কিছু চাওয়ার নেই। তিনি আনন্দিত ও গর্বিত তাঁর জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দাঁড়িয়ে আছে।
তবে এখানে একটি স্মৃতিপাঠাগার গড়ে তোলার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। তিনি চান, সেই ৩৬৫ জনকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হোক।
মর্তুজ আলীর ছেলে জুবায়ের আহমেদ ও মেয়ে নুসরাত জাহান মিলি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ধরে রাখতে তাঁদের দাদা ও বাবা জমি দান করেছেন। এমন কাজের জন্য অনেক গর্ববোধ করেন তাঁরা।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাবা-ছেলের দান করা জমিতেই এখন একটি স্মৃতিসৌধ ও একাত্তরে হত্যার শিকার নিরীহ মানুষদের নামফলক রয়েছে। রাস্তার পাশে এমন জায়গা পাওয়া খুব সহজ কথা নয়। জায়গাটুকু দান করায় আমরা সবাই তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’