সংগীতসাধক ছিলেন তিনি। সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িটায় সারাক্ষণই কেউ না কেউ রেওয়াজ করতেন। নিজে রেওয়াজ করতেন দিনে গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। এ রকম একটি বাড়িতে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁরা পড়াশোনার পাশাপাশি সংগীতের সঙ্গেও সখ্য গড়ে তুলবেন, এ আর নতুন কী?
তাই ছেলে বাপ্পা মজুমদার হয়ে ওঠেন শিল্পী। বাবা বারীণ মজুমদারের হাত ধরে এগিয়ে যেতে থাকেন।
বারীণ মজুমদার চর্চাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। গান করবেন অথচ চর্চা করবেন না, এটা মেনে নেননি তিনি। সেই সঙ্গে পরিবারের প্রতি ছিলেন পুরোপুরি নিবেদিত একজন। পরিবারের সবাই যে যার কাজটা করছে কি না, সেদিকেও রাখতেন নজর।
মাছ ধরতে পছন্দ করতেন, পছন্দ করতেন ঘুরে বেড়াতে। আর বাগান? বারীণ মজুমদার বাগান ভালোবাসতেন খুব। নিজ হাতে কোদাল চালাতেন বাগানে।
তবে সংসারে সুখ আসে সবাই মিলিতভাবে কাজ করলে। বারীণ মজুমদার তাঁর স্ত্রী ইলা মজুমদারের কাছ থেকে সহযোগিতা না পেলে বড় মানুষ হয়ে উঠতে পারতেন না।
তাঁকে আগ্রা ও রঙ্গিলা ঘরানার সাধক বলা হয়। দেশভাগের আগে ১৯৩৮ সালে কলকাতায় তিনি ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে রীতি অনুযায়ী তালিম নিয়েছিলেন। সংগীতের প্রতি আগ্রহ দেখে বাবা নিশেন্দ্রনাথ লক্ষ্ণৌ থেকে ওস্তাদ রঘুনন্দনকে নিয়ে আসেন কলকাতায়। তিনি তালিম দেন বারীণকে। ১৯৩৯ সালে লক্ষ্ণৌর মরিস ‘কলেজ অব মিউজিক’-এ সরাসরি তৃতীয় বর্ষে ভর্তি হন তিনি। ১৯৪৩ সালে সেই কলেজ থেকেই ‘সংগীতবিশারদ’ ডিগ্রি পান।
১৯৪৭ সালে চলে আসেন পাবনায়। ১৯৫২ সালে বসতভিটাসহ পৈতৃক সম্পত্তি সরকারি দখলে চলে যায়। নিঃসম্বল বারীণ মজুমদারেরা ১৯৫৭ সালে চলে আসেন ঢাকায়। ঢাকা বেতার থেকে নিয়মিত রাগসংগীত পরিবেশন করেন। ১৯৬৩ সালে কাকরাইলে ‘কলেজ অব মিউজিক’ প্রতিষ্ঠা করেন। টেলিভিশনে নিয়মিত রাগসংগীত পরিবেশন করেন।
১৯৬৮ সালে সংগীত মহাবিদ্যালয়কে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে পরিণত করেন। বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন ১৯২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া এই সুরসাধক। তিনি মৃত্যুকে বরণ করে নেন ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর।