সৈয়দ মুজতবা আলীর কাছে পান্ডাদের অত্যাচারের কথা অজানা ছিল না। তীর্থস্থান দর্শনে গেছেন জেরুজালেমে। তারপর বেথলেহেম। এখানেও তিনি শিকার হলেন পান্ডাদের আক্রমণের। ভেবেছিলেন, এখানে এসে দেখতে পাবেন বাইবেলে বর্ণিত ভাঙাচোরা সরাই আর জরাজীর্ণ আস্তাবল–যেখানে যিশু জন্মেছিলেন। কিন্তু আসলে সেসব ভেঙেচুরে তৈরি হয়েছে এক বিশাল গির্জা। গির্জাটি দর্শনধারী। গাইডবুকে লেখা ছিল, গির্জার নিচে ভূগর্ভে এখনো সেই আস্তাবল আছে, যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যিশু। সেই গহ্বরে তো যেতে হবে। কিন্তু তার দরজায় এক ষন্ডা সাইজের পান্ডা দাঁড়িয়ে। গুরুগম্ভীর কণ্ঠে সে জানতে চায়, ‘হোয়াট ল্যাংগুয়েজ? কেল লাঁগ? বেলশে শপ্রাখে? লিসান এ?’ এভাবে বারোটা ভাষায় সে জানতে চায়।
মুজতবা আলী বলেন, ‘হিন্দুস্তানি।’
পান্ডা বলে, ‘দস পিয়াস্তর!’ অর্থাৎ এক টাকা দর্শনী দিতে হবে।
মুজতবা আলী অবাক। যিশুর জন্মস্থান দেখতে পয়সা দিতে হবে! গাইডে লেখা ছিল দুই পথে গহ্বরে যাওয়া যায়। দ্বিতীয় পথে গেলে সে রকম এক ষন্ডামার্কা পান্ডা তাঁর পথ আটকাল।
মুজতবা পান্ডাকে বললেন, ‘দেশে গিয়ে কাগজে লিখব, রোমান ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠান কী রকম প্রভু যিশুর জন্মস্থান ভাঙিয়ে পয়সা কামাচ্ছে!’
পান্ডা একটু ভাবল। তারপর ডাকল মুজতবা আলীকে। বলল, ‘শোনো! তুমি সত্যিই এত টাকা খরচ করে এখানে এসে দশ পিয়াস্তের জন্য তীর্থ না দেখে ফিরে যাবে?’
মুজতবা বললেন, ‘আলবত! প্রভুর জন্মভূমি দেখার জন্য পয়সা দিয়ে প্রভুর স্মৃতির অবমাননা করতে চাইনে।’
দাড়ি চুলকে পান্ডা বলল, ‘যদি প্রতিজ্ঞা করো, কাউকে বলবে না আমি তোমাকে ফ্রিতে ঢুকতে দিয়েছি, তবে...’
মুজতবা আলী বললেন, ‘আচ্ছা, এখানে তোমার ব্যবসা মাটি করব না। কিন্তু দেশে গিয়ে বলতে পারব তো?’
পান্ডা হার মানল।
সে গল্প বেথলেহেমের মানুষ না জানল, আমরা তো জানতে পারলাম!
সূত্র: সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯-২১