নরসিংদীর বেলাব উপজেলার পুড়াদিয়া-হাড়িসাংগান পর্যন্ত সড়ক সংস্কার হয় না প্রায় ২২ বছর। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে রয়েছে প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে দ্রুত এই সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হোক। অন্যদিকে প্রশাসন বলছে, ইতিমধ্যে রাস্তাটির সংস্কার ও প্রশস্তকরণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটি উপজেলার পুড়াদিয়া বাজার থেকে টঙ্গীরটেক বাজার হয়ে হাড়িসাংগান স্কুল পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়ক। সড়কের বেশিরভাগ অংশেই পীচ উঠে গেছে এবং খানা খন্দে ভরা। শুকনো সময়েও রাস্তায় ভারী পণ্যবাহী কোনো পরিবহন তো দুরে থাক মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ভ্যানও চলাচল করতে পারছে না। প্রতিনিয়তই এসব যান চলাচলের সময় দুর্ঘটনার পড়ে এবং আহত হন অনেকেই। বাধ্য হয়ে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে সময় এবং খরচ বেশি হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে কোনোমতে হেঁটে চলাচল করা গেলেও, বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন খানাখন্দে পানি জমে যায়। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় থাকে না এটি রাস্তা না খাল। কৃষিপ্রধান এই এলাকার মানুষ তাঁদের উৎপাদিত সবজি ফসল নিয়ে আছে বিপাকে। মাথায় করে, শ্রমিক দিয়ে দীর্ঘ রাস্তা অতিক্রম করে বেলাব-পোড়াদিয়া রাস্তায় নিয়ে রিকশা, অটোরিকশা বা অন্য যানে যেতে হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অনেকটা যুদ্ধের মত।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কয়েকবার সংস্কারের উদ্যোগ হিসেবে প্রশাসনের লোকজন সড়ক মাপ ঝোঁক করলেও এখনো কোনো কাজ শুরু হয়নি। দীর্ঘদিনের দুর্ভোগে বিরক্ত সাধারণ মানুষের বলছে, এর চেয়ে মাটির রাস্তায়ও ভালো।
হাড়িসাংগান গ্রামের প্রহল্লাদ দেবনাথ বলেন, 'রাস্তায় একদম চলাচল করা যায় না। অফিসারেরা আইয়া খালি মাপে। কিন্তু কাম কাজ করে না আর পরে।'
ভাবলার গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, 'কলা, টমেটো, আলু, শিমসহ সব শাকসবজি লইয়া কি বিপদে যে আছি কারে কমু? হেরা ভোটের সময় আমডার হাতে পায়ে ধরে। এমপি, চেয়ারম্যান আর মেম্বার অইয়া আর খোঁজখবর রাহে না।'
হাড়িসাংগান উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ আফ্রাদ বলেন, এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এই রাস্তাটির অবস্থা নাজুক। সময়মতো শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারেন না। বৃষ্টি এলে তো অবস্থা ভয়াবহ হয়। রাস্তাটি সংস্কার করা জরুরি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, 'দুই বছর ধরেই মাপ ঝোঁক চলেছে। মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল এবার হয়তো দুঃখ ঘুচবে। কিন্তু মাপ ঝোঁক পর্যন্ত ই শেষ। শোনা গিয়েছিল রাস্তা আরও প্রশস্ত হবে, উন্নতমানের রাস্তা হবে। খুব শিগগিরই এর কাজ চলবে। অথচ সড়ক এখনো খানাখন্দভরা। পীচ ও কংক্রিট উঠে যাওয়ায় কোনভাবেই চলাচল করা যাচ্ছে না।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. শামসুল হক ভূঁইয়া বলেন, 'সড়কের দুরবস্থার কথা শুনেছি। ইতিমধ্যে রাস্তাটির সংস্কার ও প্রশস্তকরণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে।