মিরপুরের পল্লবী থানা হেফাজতে নির্যাতনে ইশতিয়াক হোসেন জনি হত্যার ৯ বছর আজ। ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে জনিসহ আটজনকে আটকের পর থানায় নির্যাতনে ৯ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় জনির। আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। রায়ে তিন পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন ও দুই সোর্সের ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া রায়ের ১৪ দিনের মধ্যে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু দেড় বছরেও ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি জনির পরিবার। মামলার রায়ও আটকে আছে আপিলে।
নিহত জনির ছোট ভাই ও মামলা বাদী ইমতিয়াজ হোসেন রকি বলেন, ‘নানা হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে রায় দেন আদালত। কিন্তু রায় হলেও মামলার পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পলাতকদের মধ্যে পুলিশের তৎকালীন এসআই কামারুজ্জামান এবং পুলিশের সোর্স রাশেদ। তবে রাশেদ মিরপুরেই আছে।’
সাজাপ্রাপ্ত রাশেদকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না উল্লেখ করে রকি বলেন, ‘আগে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করলেও রাশেদ এখন মাদকের ডিলার। আমাকে এখনো হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের নাকের ডগায় মাদক পাচার করলেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। আমি তাঁর বিষয়ে তথ্য দিয়ে যোগাযোগ করলে পুলিশ বলে, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু তার পরও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে সে। তাই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ উচ্চ আদালতেও ন্যায়বিচার আশা করে রকি বলেন, ‘আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে পুলিশ। আদালত অপরাধীদের শাস্তি দিয়েছেন। উচ্চ আদালতেও ন্যায়বিচার পাব বলে আশা করি। এদিকে রায়ের দেড় বছরেও ক্ষতিপূরণ পাইনি। ক্ষতিপূরণ চাই না বরং রাষ্ট্র তার পরিবারের দায়িত্ব নেবে—এটাই আশা করি।’
জনি হত্যা মামলায় আইনি সহায়তা দিয়ে আসা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে একটি যুগান্তকারী রায় হলো জনি হত্যা মামলার রায়। ব্লাস্ট নিহত জনির পরিবারের পাশে ছিল এবং থাকবে। তবে মামলাটি আপিল পর্যায়ে থেমে আছে। এদিকে আসামিরা জামিনের চেষ্টা করছে। তবে আমরা খেয়াল রাখছি, যেন তাঁরা জামিন না পান। তাহলে এই মামলার শুনানি থেমে যাবে। আশা করছি, দ্রুতই এই মামলার শুনানি হবে।
২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১১ নম্বর সেক্টরে স্থানীয় একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে জনি ও তার ভাই রকিসহ আটজনকে আটক করে পল্লবী থানা-পুলিশ। পরে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে জনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।