এবারের বিশ্বকাপে গোল করেও যেন শান্তি নেই খেলোয়াড়দের! এই গোল উদ্যাপন তো পরমুহূর্তে সব মাটি। অফসাইডেই ‘অফ’ হয়ে যাচ্ছে গোলের আনন্দ।
গোল পরীক্ষা করতে ক্ষণিকের জন্য খেলা বন্ধ রেখে রেফারিকে ছুটতে হচ্ছে মনিটরের সামনে। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সহায়তায় নিতে হচ্ছে সিদ্ধান্ত। বিশ্বকাপে এ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে। তখন ভিএআর নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। আর এখন তো এই প্রযুক্তি ছাড়া একেবারে চলছেই না রেফারির। কাতার বিশ্বকাপে সেটা চলে গেছে আরেক ধাপে। যোগ হয়েছে ফিফার সেমি-অটোমেটেড প্রযুক্তি। মুহূর্তে ত্রিমাত্রিক ছবিতে অফসাইড বের করে ফেলছে এ প্রযুক্তি।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, অফসাইডের বিষয়ে একচুলও নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। পান থেকে চুন খসামাত্র পাঁচ আঙুল সোজা রেখে রেফারির সংকেত। ফুটবলের সহজ বিষয়টি নিয়েই এখন চারদিকে তর্ক-সমালোচনা। নিয়ম অনুযায়ী, আক্রমণে যাওয়া কোনো খেলোয়াড় বল ছাড়া প্রতিপক্ষের কোনো ডিফেন্ডার বা খেলোয়াড়ের আগে যেতে পারবেন না। ভিএআর প্রযুক্তি আসার আগে রেফারির চোখকে ফাঁকি দিয়ে অনেকে অফসাইডেও গোল পেয়েছেন। কিন্তু এখন যদি একটু বল ছাড়া খেলোয়াড় রক্ষণভাগে ঢুকে পড়েন, সঙ্গে সঙ্গে সহকারী রেফারি ফ্ল্যাগ ওপরে তো তুলছেনই, প্রযুক্তির সহায়তাও বাতিল হচ্ছে একের পর এক গোল। এর প্রভাব পড়ছে ম্যাচের ফলেও।
কোচরাও প্রতিপক্ষের আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়দের ঘায়েল করতে বেছে নিচ্ছেন অফসাইড কৌশল। যার সর্বশেষ শিকার আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ম্যাচের টার্নিং পয়েন্টই ছিল অফসাইড। সৌদির কোচ হার্ভি রের্নার্দের কৌশল অনুযায়ী তাঁর শিষ্যরা হাইলাইন ডিফেন্সে ফাঁদে ফেলে লাওতারো মার্তিনেজকে। অফসাইডের কারণে তিনটি গোল বাতিল হয় লা আলবিসেলেস্তাদের।
প্রথমার্ধেই সাতটি অফসাইড ছিল আর্জেন্টিনার। ওই ম্যাচে ১১ অফসাইডের ১০টি করেছে আর্জেন্টিনা। যেটি এখন পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ অফসাইডের রেকর্ডও। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০টি অফসাইড হয়েছে স্পেন-কোস্টারিকা ম্যাচে।
শেষ পর্যন্ত ড্র করে আসরের দ্বিতীয় রাউন্ডের আশা বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে জার্মানি। টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ ৭টি অফসাইড হয়েছে এ ম্যাচে। এক ফ্রি-কিকের সময় ৬ জার্মান খেলোয়াড় অফসাইড হয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফ্লিকের শিষ্যদের নিয়ে উপহাস শুরু করেছেন স্প্যানিশ সমর্থকেরা। একজন লিখেছেন, ‘দয়া করে কেউ জার্মানিকে অফসাইড নিয়ম শেখান।’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘জার্মানি অফসাইডের রাজা।’
কাতার বিশ্বকাপে গতকাল সার্বিয়া বনাম ক্যামেরুনের ম্যাচ পর্যন্ত অফসাইড হয়েছে ১১১টি। এর মধ্যে একটিও অফসাইড হয়নি শুধু পোল্যান্ড-সৌদি আরব ম্যাচে। হয়তো রের্নার্দের দলের আগের ম্যাচ দেখে তাদের হাইলাইন ডিফেন্স নিয়ে সতর্ক ছিল পোলিশরা। ২০২২ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত (সার্বিয়া-ক্যামেরুন ম্যাচ) ভিএআর দেখে অফসাইডে গোল বাতিল হয়েছে ৬টি। আর প্রথমে অফসাইড দেখিয়ে পরে গোলের সংখ্যা ১টি। সব মিলিয়ে অফসাইডের কারণে গোল বাতিল হয়েছে ১৩টি।
বিশ্বকাপে এক ম্যাচে কোনো দলের সর্বোচ্চ অফসাইডের সংখ্যা কত জানেন? ১৯৮২ বিশ্বকাপের নবাগত কুয়েতের বিপক্ষে ২০টি অফসাইড হয় ইংলিশদের। একই বিশ্বকাপে চেকোস্লোভাকিয়ার অফসাইড ১৮টি। এবারও প্রতিপক্ষ কুয়েত। এই তালিকায় তিনে থাকা দলটির নামও ইরান। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে ১৬ অফসাইড করে ‘থ্রি-লায়ন্স’রা।