মাত্র দেড় বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন। অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। দুই কক্ষের সেমিপাকা ছোট্ট বাড়িতে চৌকি ছাড়া তেমন কিছুই ছিল না। ছিল না পড়ার টেবিলও।
কখনো চৌকি, কখনো টিনের বাক্সে বইখাতা রেখে লেখাপড়া করতেন তিনি। কিন্তু লেখাপড়ার হাল ছাড়েননি। সেই মেয়ে এবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে পরিবার ও এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
অন্তরা খাতুন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের বড়ছয়ঘটি গ্রামের দিনমজুর আলাউদ্দিন প্রামাণিকের মেয়ে। এই গ্রামে অন্তরার আগে কেউ সরকারি মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পায়নি।
মেডিকেলে ভর্তি কোচিংয়ের জন্য বাড়ির গাভি বিক্রি করে দেন অন্তরার মা। মা-ভাইয়ের কষ্টার্জিত অর্থ ও নিজের টিউশনির টাকায় অনেক কষ্টে পড়াশোনা চালিয়েছেন তিনি।
গ্রামের ব্র্যাক স্কুলে ভর্তির পর থেকে সংগ্রাম করে লেখাপড়া করতে হয়েছে অন্তরাকে। প্রাথমিকের পর উপজেলার চণ্ডীপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোন তিনি। এরপর ভর্তি হন উপজেলা সদরে অবস্থিত শাহদৌলা সরকারি কলেজে। ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।
মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এগিয়ে এসেছেন কয়েকজন। অন্তরা বলেন, ভর্তির টাকা ইতিমধ্যে জোগাড় হয়েছে। ৫ বছরের পড়াশোনার খরচ তাঁর পরিবারের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
অন্তরার মা রসুনা বেগম জানান, আঠারো বছর আগে এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে তার স্বামী আলা উদ্দীন মারা যান। স্থানীয় রাইস মিলে ও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে ছেলে-মেয়ের মুখে খাবার জুগিয়েছেন তিনি। মেয়ে মুখ উজ্জ্বল করেছেন তাঁর।
জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, জেলা প্রশাসন অন্তরার ভর্তির খরচ বহন করবে। ইতিমধ্যে ২০ হাজার টাকা তিনি দিয়েছেন। তিনি অন্তরাকে আশ্বস্ত করেছেন, পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহের জন্য যখনই দরকার হবে, তখনই জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁর পাশে থাকবেন।