৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পরপরই নিজামুদ্দীন আহমদ তাঁর বাড়ির ছাদে কালো পতাকা উত্তোলন করেন। ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরু হওয়ার দিন রাত ৯টা পর্যন্ত তিনি তাঁর পিপিআই অফিসেই ছিলেন। সে রাতে তাঁকে ফোন করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। নিজামুদ্দীন আহমদ আওয়ামী লীগ নেতাকে বলেছিলেন, যেভাবে পারেন এখনই আত্মগোপনে চলে যান। সে রাতে তিনি বাড়িতে কাটিয়েছিলেন। এরপর একটি রেডিও হাতে তিনি বেরিয়ে যান। ঢাকা শহর কেমন আছে সেটা জানা এবং অফিসের কোথায় কী রয়েছে, সেই খবর জানা জরুরি হয়ে পড়েছিল নিজামুদ্দীন আহমদের জন্য।
যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের খবর প্রচার করতেন। কিন্তু পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে পারেননি। দুবার তাঁকে রাও ফরমান আলীর দপ্তর থেকে ডেকে নিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল।
নিরাপত্তার কারণে সে সময় বাড়িতে থাকা কঠিন হয়ে পড়লে তিনি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে থাকলেন কিছুদিন। পাকিস্তানি বাহিনী এ সময় তাঁকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে পশ্চিম পাকিস্তানে ডেকে পাঠিয়েছিল। তিনি কৌশলে সেখানে যাননি।
পুরান ঢাকায় রতনপুরের বাড়িতে বসে খবর টাইপ করছিলেন ১২ ডিসেম্বর দুপুরবেলায়। খিদে পেয়েছিল বেশ।
‘রেবা, খিদে পেয়েছে, ভাত খাব।’
স্ত্রী কোহিনুর আহমদকে বললেন তিনি।
টেবিল সাজিয়ে ডাকতে এসে রেবা দেখেন, ঘুমিয়ে পড়েছেন তিনি। ক্লান্ত মানুষটাকে আর ডাকার ইচ্ছে হলো না। কিছুক্ষণ পর নিজেই ঘুম থেকে উঠে ছেলে বাপ্পীকে নিয়ে খেতে বসলেন। একটু পর যোগ দিল দুই মেয়ে। সপরিবারে খাচ্ছেন নিজামুদ্দীন। এ রকম সময় দরজায় শিকল নাড়ানোর শব্দ পাওয়া গেল। দরজায় আর্মি আর আলবদর বাহিনীর লোকজন দাঁড়িয়ে। পরিচয়পত্র দেখানোর পর তারা নিশ্চিত হলো ইনি নিজামুদ্দীন আহমদ।
সামনে-পেছনে রাইফেল ধরে নিয়ে যাওয়া হলো নিজামুদ্দীন আহমদকে। তিনি আর ফিরে আসেননি।
সূত্র: মো. আমির হোসেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক