‘হায়রে আমার তালের পাখা শীতকালে তো হয় না দেখা, গরমকালে প্রাণের সখা’—গ্রাম বাংলার একটি প্রবাদ এটি। তীব্র গরম, সেই সঙ্গে লোডশেডিংয়ের সময় গ্রামে গ্রামে তালের পাখা সখা হয়ে শীতল করে শরীর। চৈত্রে প্রচণ্ড গরমে তালের পাখা তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন গৌরনদীর কারিগরেরা।
পূর্ব পুরুষের এ ব্যবসা করে এখনো সংসার চালাচ্ছেন গৌরনদী উপজেলার প্রায় ২০০ পরিবার। এর মধ্যে চাঁদশী গ্রামে আছে শতাধিক পরিবার। গরম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কাজ বেড়ে গেছে তাঁদের। একটি পাখা তৈরি করতে কয়েকটি হাতের ছোঁয়া লাগে বলে কারিগররা জানান।
চাঁদশী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পাখা পল্লির প্রতিটি বাড়িতেই চলছে পাখা তৈরির কাজ। বাড়ির গৃহবধূ থেকে শুরু করে পরিবারের অনেক সদস্যই ব্যস্ত সময় পার করছেন পাখা তৈরিতে।
কারিগরেরা জানান, হাতপাখা তৈরির প্রধান উপকরণ তালপাতা। তালপাতা বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনে আনতে হয়। তারপর পাতা রোদে শুকিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। পরে পানি থেকে উঠিয়ে নরম ভেজা পাতা গোলাকার করে কেটে রেখে দেওয়া হয়। এরপর বোঝা বেঁধে পাতা ঘরে রেখে দেন এবং সেখান থেকে পাতা নিয়ে বাড়িতে বসে তালপাখা তৈরি হয়। একটি তালপাতা থেকে চার-পাঁচটি হাতপাখা তৈরি হয়। ছাঁটাই ও তৈরি পাখা বিক্রির দায়িত্ব পালন করে আসছেন পুরুষ সদস্যরা। আর পাখা তৈরি ও সুতা দিয়ে বাঁধাইয়ের কাজ করছেন পরিবারের নারী সদস্যরা।
ওই গ্রামের পাখা তৈরির কারিগর খালেক, ফজলু, আব্দুর রহিম জানান, তাঁদের পূর্ব পুরুষেরা এই পাখা তৈরির কাজ করতেন। একে ধরে রেখে এখনো তাঁরা পাখা তৈরি করছেন।
পাখা তৈরির কারিগর মস্তফা জানান, চৈত্র থেকে শুরু করে জ্যেষ্ঠ মাস পর্যন্ত পাখা বিক্রির মৌসুম হলেও চৈত্র ও বৈশাখ মাসই পাখা বিক্রির উপযুক্ত সময়। প্রচণ্ড গরমে ও মাঝে মাঝে বিদ্যুতের লোডশেডিং এ সময়টাতে পাখা বেশি বিক্রি হয়।
খালেক নামের আরেক কারিগর জানান, পাখা তৈরির প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেশি। প্রতিটি পাখায় তৈরি পর্যন্ত প্রায় ৬-৮ টাকা খরচ হচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৮-১০ টাকায়। একজন কারিগর প্রতিদিন ৫০-৬০টি তালপাখা তৈরি করতে পারেন।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, চাঁদশীর পাখাশিল্পের বিষয়ে ইতিমধ্যে জেনেছি। শিগগিরই পাখাপল্লির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।