তাঁর কেউ নেই; একাই থাকেন। কোনোমতে একটি ঝুপড়িতে রাত যাপন করতেন বৃদ্ধা সামাপ্রু মারমা। শেষ বয়সে চালচুলা ও ঘরহীন অবস্থায় মারা যাবেন—এই যখন ভাবনা, তখন তাঁর পাশে দাঁড়ালেন কয়েকজন যুবক। সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে নিজেদের অর্থায়নে তাঁকে একটি টিনের ঘর তৈরি করে দিলেন তাঁরা। শেষ বয়সে একটি ঘর পেয়ে তাঁর এখন আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো আনন্দ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের বটতলী বাগমারা পাড়ায় মারমা জনগোষ্ঠীর ৮০ বছর বয়সী সামাপ্রু মারমা। ৪০ বছর ধরে ওখানে থাকেন। বর্তমানে এই ভুবনে আপন বলতে কেউ নেই তাঁর। দুমুঠো অন্নের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে যা পান, তা দিয়েই জীবনধারণ করেন। প্রতিদিন সকালে থালা ও লাঠি নিয়ে ভিক্ষার জন্য বের হন, এভাবেই চলছে জীবন। আশপাশের লোকজন ‘বুড়ি মা’ নামেও চেনেন তাঁকে।
বৃদ্ধাটি ভাঙা ঝুপড়িতে কোনোমতে দিন-রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন। এই অবস্থা দেখে ফেসবুকে তাঁর কষ্টের কথা তুলে ধরা হয়। এটি দেখে কয়েকজন যুবক তাঁকে সহযোগিতায় এগিয়ে এলেন। নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে একটি ঘর বানিয়ে দেন।
এলাকার বাসিন্দা মংসিং মারমা জানান, স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন-গ্রাউসের মাঠকর্মী সা অং মারমা ওই পাড়ায় কর্মসূত্রে নিয়মিত যান। সেখানে আশি পেরোনো বৃদ্ধার দুরবস্থা দেখে ফেসবুকে ঘটনা তুলে ধরেন সা অং মারমা। ছবিসহ সংবাদটি এলাকায় ব্যাপক সাড়া (ভাইরাল) পড়ে। কয়েকজন যুবক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
গ্রাউস-এর মাঠকর্মী সা অং মারমা সাংবাদিকদের জানান, বৃদ্ধার দুরবস্থা দেখে ফেসবুকে তিনি লেখার পর এভাবে সাড়া পাবেন ভাবেননি। কয়েকজন যুবক এগিয়ে আসায় নিজেও এই মহতী কাজে যুক্ত হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মংসিং মারমা বলেন, শেষ বয়সে বৃদ্ধার একটি টিনের ঘর হলো। এখন তাঁর আহারের ব্যবস্থা কেউ করলে বৃদ্ধা শান্তি পাবেন।
বৃদ্ধা সামাপ্রু মারমা জানান, আপন বলতে কেউ নেই তাঁর। ভিক্ষা করেই জীবন কাটান। কোনোমতে একটি ঝুপড়িতে থাকতেন। কয়েকজন যুবক তাঁর জন্য একটি টিনের ঘর বানিয়ে দিয়েছেন, এতেই খুব খুশি। ঘর করে দেওয়া যুবকদের জন্য দোয়া করে বলেন, যাঁরা তাঁর জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, তাঁদের মঙ্গল সৃষ্টিকর্তা করবেন।