বৃহত্তর চট্টগ্রামে উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় সাপের দংশনের প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম না থাকায় প্রতিনিয়ত সাপে কাটা রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চিকিৎসকেরা জানান, অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ (পুশ) করতে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক প্রয়োজন। অনেক চিকিৎসক অ্যান্টিভেনম পুশ করতে ভয় পান। এ জন্য চট্টগ্রামের সাপে কাটা রোগীদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ততক্ষণে অনেক রোগী মারা যান।
জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে হাটহাজারীর নাঙ্গলমোড়ার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলামকে বিষধর সাপে দংশন করে। অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা পরদিন সকালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাটহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে ১৭ আগস্ট মিরসরাইয়ের শ্রীপুর গ্রামে সাপের দংশনে তাহমিনা আক্তার লিজা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় রান্না করতে লাকড়ি নেওয়ার সময় বিষধর একটি সাপ তাঁর হাতে দংশন করে। এরপর তাকে মিরসরাই স্টেশন এলাকায় এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ওঝা ঝাড়ফুঁক দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। বাড়িতে যাওয়ার পর হাতে দেওয়া বাঁধন খুলে দিলে মেয়েটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। এরপর মস্তাননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত ২০ জুলাই সীতাকুণ্ডে সাপের দংশনে সাইমা করিম লিমা (২৪) নামের সাত মাসের এক অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় সাপে দংশন করলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
এভাবে প্রতিষেধকের অভাবে প্রতিবছর বৃহত্তর চট্টগ্রাম, বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে বহু লোক মারা যাচ্ছেন। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার সময়মতো সাপে প্রতিষেধক না পাওয়ার বিষয়টিকে দুষছেন।
উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় সাপের দংশনের প্রতিষেধক না থাকায় রোগীদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এতে পথে অনেক রোগী মারা যান।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে একটি আলাদা কক্ষে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে এখন সব উপজেলা হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম মজুত রাখতে বলা হয়েছে। অ্যান্টিভেনমের মেয়াদ চলে গেলে আবার পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে।
বান্দরবানের সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন নন্দী আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁর জেলার অ্যান্টিভেনমের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, আবার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, অ্যান্টিভেনম পুশ করতে প্রশিক্ষিত হতে হয়। অনেক চিকিৎসক না জানার কারণে অ্যান্টিভেনম পুশ না করে রোগী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।