গাজীপুরে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বিএনপির এক নেতাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নিতে দেওয়া হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ছাত্রদলের এক নেতাকে একই কায়দায় মায়ের জানাজায় অংশ নিতে দিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে কাশিমপুর কারাগার ও পুলিশ। এমন দায়িত্বহীনতাকে ‘ইচ্ছাকৃত নিষ্ঠুরতা’ বলছেন অনেকে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কারা অধিদপ্তরকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা। রাজধানীর দনিয়ায় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তিনি। গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টন থেকে সেলিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত রোববার সকালে সেলিম রেজার মা মারা যান। ওই দিন দিবাগত রাতে শরীয়তপুর সদর উপজেলার সুজনদোয়াল গ্রামে হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়ি পরে মায়ের জানাজায় অংশ নিতে হয় তাঁকে।
এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। যদিও এ ঘটনায় কারাগার ও পুলিশ—কেউ দায় নিতে চাইছে না। এর আগে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজম মায়ের মৃত্যুতে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে একইভাবে হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন। তখনো এ বিষয়ে সমালোচনা হয়েছিল।
শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবুল হোসেন জানান, পুলিশকে অনুরোধ করা হলেও তারা ডান্ডাবেড়ি খুলে দেয়নি। প্যারোলে দাফনের সময় খোলা হাত-পায়ে কবরে মাটি দিতে পারেননি সেলিম।
ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজার পরিবারের সদস্যরা জানান, সেলিমকে গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আটক করে পুলিশ। এরপর ১০ ডিসেম্বর পল্টন থানার নাশকতার একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
বারবার কারাগার ও পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডকে অমানবিক আচরণ উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘কারাগার ও পুলিশের এমন আচরণ সংবিধান পরিপন্থী। সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, কোনো নাগরিককে নিপীড়ন করা যাবে না, যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত ছিল ডান্ডাবেড়ি খুলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ ও কারাগারকে আরও দায়িত্বশীল ও মানবিক হওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনাটি অনেক রাতের। শরীয়তপুর জেলা পুলিশের কোনো ঘটনা না। এটা কারাগার জানে। কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ গাজীপুর জেলা পুলিশ দিয়ে সেলিমকে পাঠিয়েছিল। আমাদের কোনো দায়িত্ব ছিল না।’
গাজীপুর জেলা পুলিশের চাওয়া অনুযায়ী ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারাগারটির জেলার তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পুলিশ যখন যেভাবে চায় আমরা ঠিক সেভাবে বন্দীকে তাদের হাতে দিয়ে থাকি। কারা কর্তৃপক্ষের কোনো ইচ্ছার প্রতিফলন এখানে নেই।’ তবে বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন গাজীপুর জেলার পুলিশের এসপি কাজী শফিকুল আলম।
এক মাস পার না হতেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাকে ইচ্ছাকৃত নিষ্ঠুরতা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি বলেন, ‘যাঁদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে জানাজায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা কেউ সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী না। তাঁরা একটি দলের রাজনৈতিক কর্মী। তাঁদের সাজাও হয়নি। মামলা চলমান। তাঁদের এভাবে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজায় নেওয়া খুবই মর্মান্তিক। এটা নিষ্ঠুরতা। একই ঘটনা কেন ঘটছে? হয়তো এটা ইচ্ছাকৃতভাবেই কারাগার ও পুলিশ করছে। তাঁদের যন্ত্রণা দেওয়ার জন্যই এটা করা হচ্ছে।’