শেরপুরের শ্রীবরদীতে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। শনাক্তের হার ২ শতাংশ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে। দিন দিন করোনা সংক্রমণ বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা দেখা গেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। গতকাল শনিবার উপজেলার বিভিন্নস্থান ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
জানা গেছে, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সারা দেশে ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। এর মধ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা মানছেন না। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মেনে মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা করছেন। নানা অজুহাতে মাস্ক ছাড়াই বাইরে কেনাকাটাসহ সর্বত্র ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় সাধারণ মানুষদের। কয়েকজনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তারা জানান, কৃষকদের করোনা ধরে না। আমরা খেত-খামারে থাকি বেশি সময়। এতে শরীরে রোদ লাগে। আর রোদের কারণে করোনা সব মরে যায়।
জালকাটা গ্রামের কৃষক আলম মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি মাস্ক পড়েননি। মাস্ক কেন পড়েননি জানতে চাইলে বলেন, আমি খেতে কাজ করি। আমার কোনো করোনা হবে না। যারা এসিতে থাকে তাদের করোনা হবে। এ ছাড়াও আমি পান জর্দা খাই আমার করোনা হবে না। টিকা দিয়েছেন নাকি জানতেই রেগে গিয়ে বলেন, টিকা দিয়ে কি হবে? শুনছি টিকা দেওয়ার পরও করোনা হয়েছে।
মাটিয়াকুড়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি মাস্ক পড়ি। আজ ভুলে বাড়িতে রেখে এসেছি।
আটাকান্দা গ্রামের মো. কিসমত আলী বলেন, ‘বাপু করোনা কই পাবা, এল্লে হুদাই। আমরা যে কাজ করি আবার করোনা থাকবো আমগর শইল্লে। এজন্য মাস্ক টাক্স পড়ি না, যখন দেহি আইনের লোক আছে পকেটে মাস্ক রাইখাই দেই, তখন পড়ি।’
শ্রীবরদী উপজেলার মাটিয়াকুড়া এলাকার কৃষক হাইবর রহমান বলেন, ‘কৃষক মানুষগর করোনা ধরব না, আমরা হারাদিন রোদে থাহি, এজন্য করোনা সব মরে গেছে।’
শ্রীবরদী বাজারের বাসিন্দা হাসান ফরহাদ বলেন, ‘আপনারা কি শুরু করছেন, একবার বললেন ১ম ডোজ, তখন দিলাম, আবার বলছেন ২য় ডোজ তাও দিলাম এখন বলছেন বুস্টার ডোজ এটাও দিলাম, তাও মাস্ক কেনো পড়া লাগবো। যদি মাস্ক পড়াই লাগে তাহলে টিকা দেওয়ার কি দরকার আছিল। আমার শ্বাসকষ্ট তাই মাস্ক পড়তে কষ্ট হয়।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, সারা দেশেই করোনা বেড়ে গেছে। আমরা টিকা নেওয়া ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সাধারণ মানুষদের সচেতন করছি। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
করোনা সংক্রমণের হার দিন দিন বাড়ার কথা স্বীকার করে জেলা সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য্য বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই সবাইকে টিকা ও মাস্ক পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের সচেতন করা হচ্ছে। সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা আক্তার বলেন, করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে গেছে। মানুষদের সচেতন করা, মাস্ক বিতরণসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।