আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি যে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, তার পেছনে কানাডাপ্রবাসী দুজন মানুষের অনেক বড় ভূমিকা আছে। তাঁদের একজন হলেন রফিকুল ইসলাম, অন্যজন আব্দুস সালাম। কী আশ্চর্য, দুই ভাষাশহীদের নামেই তাঁদের নাম।
আজ রফিকুল ইসলামের কথা বলব। কানাডার বহুভাষিক ও বহুজাতিক মাতৃভাষা প্রেমিক গোষ্ঠী এ বিষয়ে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিল। ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নামে একটি দিবস ঘোষণার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিল এই গোষ্ঠী। সেই প্রস্তাবে বর্ণনা করা হয়েছিল মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার জন্য বাঙালির সংগ্রাম ও রক্তদানের কথা। মাতৃভাষা প্রেমিক গোষ্ঠীর পক্ষে যাঁরা স্বাক্ষর করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ৭ জাতীয় ৭ ভাষার ১০ জন সদস্য। জাতিসংঘের মহাসচিবের অফিস থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে ইউনেসকো। এ নিয়ে আবেদন করতে হবে প্যারিসে জাতিসংঘের শিক্ষাবিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংগঠন ইউনেসকোর সঙ্গে।
কানাডা থেকে এ বিষয়টির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন রফিকুল ইসলাম। তিনি এবং আব্দুস সালাম টেলিফোনে ইউনেসকোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ১৯৯৯ সালের ৩ মার্চ ইউনেসকোর সদর দপ্তরের ভাষা বিভাগের কর্মকর্তা অন্না মারিয়া রফিকুল ইসলামকে চিঠি লিখে জানান, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার অনুরোধটি বেশ আকর্ষণীয়। এ ধরনের প্রস্তাব ইউনেসকোর পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্যরাষ্ট্রের মাধ্যমে সভায় তুলে ধরতে হবে।
মারিয়া কয়েকটি সদস্যরাষ্ট্রের নাম পাঠিয়ে দেন। যার মধ্যে ছিল ভারত, কানাডা, ফিনল্যান্ড ও হাঙ্গেরির নাম। কানাডা থেকে রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময়স্বল্পতার বিষয়টি উপলব্ধি করে ইউনেসকোর কাছে সরাসরি প্রস্তাবটি পাঠিয়ে দেন। ৯ সেপ্টেম্বর সেটি প্যারিসে পৌঁছায়। ইউনেসকোর নির্বাহী পরিষদের ১৫৭তম অধিবেশন ও ৩০তম সাধারণ সম্মেলন চলছিল তখন। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারি লাভ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা।
সূত্র: জাহীদ রেজা নূর, রফিকুল ইসলামের সাক্ষাৎকার।