আলী আজম বাংলাদেশের একজন নাগরিক। তাঁর বাড়ি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নে। তিনি রাজনীতি করেন এবং সরকারি দল নয়। বিএনপির ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি। গত ২৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের চন্দ্রা ত্রিমোড় কার্যালয়ে হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা এক মামলায় ২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন আলী আজম। অবশ্য ওই হামলার ঘটনায় আলী আজমের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ নেই। অর্থাৎ একটি ‘গায়েবি’ মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিএনপি না করলে হয়তো এই মামলা হতো না, তাঁকে গ্রেপ্তারও হতে হতো না।
১৮ ডিসেম্বর বিকেলে আলী আজমের মা সাহেরা বেগমের মৃত্যু হলে শেষবার মায়ের মরদেহ দেখতে ও মায়ের জানাজায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেতে তিনি প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন। ২০ ডিসেম্বর তাঁকে তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হলে নিজ বাড়িতে গিয়ে তিনি নিজেই মায়ের জানাজা পড়ান। জানাজায় অংশ নেওয়ার সময় তাঁর হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানো ছিল। উপস্থিত অনেকেই তাঁর হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়ার অনুরোধ করলেও পুলিশ তা শোনেনি।
দণ্ডিত ও ভয়ংকর জঙ্গিদের আদালতে আনা-নেওয়ার সময় কিন্তু ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়নি। পুলিশের শৈথিল্য বা গাফিলতির কারণে কিছু দিন আগে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়া বা পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও আমরা দেখেছি। ওই ছিনতাই হওয়া বা পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের এখনো পাকড়াও করা সম্ভব হয়নি।
হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানো অবস্থায় মায়ের জানাজায় আলী আজমের অংশ নেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে নিন্দা-সমালোচনা হচ্ছে। একে শুধু অমানবিক নয়, সংবিধান, আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনারও পরিপন্থী বলে উল্লেখ করছেন আইনজীবীরা। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার বা দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না। আলী আজমকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নিতে বাধ্য করে কি নিষ্ঠুর, অমানুষিক আচরণ করা হয়নি? আইন অনুযায়ী, কোনো আসামি বা অভিযুক্ত, এমনকি দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির সঙ্গেও এমন আচরণ করার কোনো সুযোগ নেই। আলী আজমের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা গর্হিত ও অগ্রহণযোগ্য। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও বলেছেন, ‘জানাজার সময় তাঁর ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া খুলে দিলে ভালো হতো।’
এখন প্রশ্ন হলো, এই ‘ভালো’ কাজটি যাঁরা করলেন না তাঁরা কারা? যে কয়জন পুলিশ আলী আজমকে কারাগার থেকে পাহারা দিয়ে নিয়ে গেছেন, শুধু তাঁরাই কি এটা করেছেন? এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কি কোনো নির্দেশনা ছিল না?
এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা চাই, এই নির্দেশনা যেন বাস্তবায়ন হয়। এ ক্ষেত্রে ঔদাসীন্য কাম্য নয়।