ঢাকার ইতিহাসের সঙ্গেই মিশে আছে ঐতিহাসিক চকবাজার শাহি মসজিদ। ১৬৭৬ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন মোগল সুবেদার নওয়াব শায়েস্তা খাঁ। ৩৪৬ বছরের ব্যবধানে মসজিদটি বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। এর আদি গড়নে তিনটি গম্বুজ ও ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি মিনার ছিল। তবে বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের ফলে বর্তমানে এর আদি রূপটি পুরোপুরি বজায় নেই। এই মসজিদই সম্ভবত বাংলায় উঁচু প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্মিত প্রাচীনতম স্থাপনা। প্ল্যাটফর্মটির নিচে ভল্ট ঢাকা কতগুলো বর্গাকৃতি ও আয়তাকৃতি কক্ষ আছে। এগুলোর মাথার ওপরে খিলান ছাদ রয়েছে, যার ওপরের অংশ অবশ্য সমান্তরাল।
ধারণা করা হয়, প্ল্যাটফর্মের নিচের কক্ষগুলোতে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের আবাসন ছিল। মসজিদের ভেতরকার নকশা তিনটি বে-তে বিভক্ত ছিল, যার মাঝখানের বে ছিল বর্গাকার, কিন্তু দুই পাশের বে ছিল আয়তাকার। তিন বে-র ওপরেই গম্বুজ দিয়ে আচ্ছাদিত ছিল, মাঝখানের গম্বুজ ছিল তুলনামূলক বড়। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অষ্টকোনাকৃতি, যা সংস্কারের পরও আগের মতোই আছে। মসজিদের মূল কাঠামো ছিল মাটি থেকে প্রায় ১০ ফুট উঁচুতে। আদিতে এর দৈর্ঘ্য ছিল ৫০ ফুট, প্রস্থ ২৬ ফুট।
প্রাচীন-বর্তমানের মিশেলে চকবাজার শাহি মসজিদের স্থাপত্যশৈলীর নান্দনিকতা যে কাউকে মুগ্ধ করবে। মসজিদের গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে একদিকে প্রাচীন কাঠামো ও পুরোনো দেয়াল যেমন চোখে পড়বে, তেমনি দৃষ্টিনন্দন অত্যাধুনিক আলোকসজ্জায় ঝলমল করবে চারদিক। মুসল্লিদের জন্য রয়েছে সুবিশাল অজুখানা।
বর্তমানে মসজিদে একসঙ্গে ১০ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রশস্ত এই মসজিদের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে সৌন্দর্য।
চকবাজারের কেন্দ্রস্থল চক সার্কুলার রোডে চকবাজার শাহি মসজিদের অবস্থান। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি ‘চক মসজিদ’ নামেও পরিচিত। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেকেই এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে এবং পরিদর্শন করতে আসেন। মসজিদের অবস্থান ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় খুব সহজেই এখানে আসা যায়। গুলিস্তান থেকে রিকশায় কিংবা লেগুনায় চকবাজারে আসা যায়। সুউচ্চ মিনার হওয়ায় দূর থেকেই মসজিদটি দেখা যায়। মসজিদকে কেন্দ্র করে চারদিকে গড়ে উঠেছে বড় বড় বিপণিবিতান।
কিংবদন্তির ঢাকা বইয়ে উল্লেখ আছে, নওয়াব শায়েস্তা খাঁ মসজিদের সামনে কিছু দোকান নির্মাণ করেছিলেন, যেন দোকানের আয় থেকে মসজিদ সুচারুরূপে পরিচালনা করা যায়। দুই ঈদ ও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে মসজিদটি আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হতো। বড় বড় উৎসবে আগের দিনের নায়েব-নাজেমরা এখানে নামাজ আদায় করতেন।
মসজিদের দক্ষিণ দিকে সুফি হজরত মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরীর ছেলে মাওলানা হাফেজ আহমদ (রহ.)-এর মাজার রয়েছে। মাওলানা হাফেজ আহমদ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনার পথে তিনি ইন্তেকাল করেন।