নাটোরের গুরুদাসপুর প্রশাসনের নারী সহায়তাকেন্দ্র গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তার ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে। এখানে ফি ছাড়াই পারিবারিক ও সামাজিক নির্যাতনের শিকার নারীরা সহায়তা পাচ্ছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে গুরুদাসপুর উপজেলা প্রশাসনের একটি কক্ষে এই নারী সহায়তাকেন্দ্রটি চালু করা হয়। ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বরে প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ২ বছরে ৩ হাজার ৯০০ জন নারী বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার পাশাপাশি নারী-শিশু নির্যাতনসহ প্রায় ২০ রকমের অভিযোগ করে সহায়তা চেয়েছেন এখানে। এই কেন্দ্রের সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন নারী উদ্যোক্তা নিয়োগ করা হয়েছে।
ওই সেবাকেন্দ্রের নারী উদ্যোক্তা বেলি খাতুন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে দিনে ২০-২৫ জন নারী তাঁদের নানা সমস্যা নিয়ে আসেন। তাঁদের অভিযোগ-অনুযোগ শুনে তা আবেদন আকারে লিপিবদ্ধ করেন তিনি। এ জন্য আবেদনকারীকে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয় না। বরং আবেদন ফরমের ২০ টাকা রাজস্ব স্ট্যাম্পটিও দেওয়া হয় উপজেলা প্রশাসনের বিশেষ তহবিল থেকে। দিন শেষে তিনি ওই আবেদনগুলো ইউএনওর কাছে জমা দেন। গুরুত্ব বুঝে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন থেকে মাস শেষে সম্মানী পান বলে জানান বেলি খাতুন।
নারী সহায়তাকেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, নারী ও শিশু নির্যাতন, ইভ টিজিং ও বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত আবেদন ১ হাজার, চিকিৎসা ও পড়াশোনার আর্থিক সাহায্য চেয়ে ৫০০, বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার বিষয়ে ৩০০, সেলাই মেশিন ও মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন ৪ হাজার, সৌরবিদ্যুৎ, টিউবওয়েল ও বৈদ্যুতিক মিটারের আবেদন ৭ হাজারটি আবেদন পড়েছে।
চাপিলা ইউনিয়নের সুমি খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী আমাকে নির্যাতন করত, সংসারে সুখ ছিল না। নারী সহায়তাকেন্দ্রে অভিযোগ করি। পরে আমার স্বামীকে ডেকে সমাধান করে দেন। আমাকে একটি সেলাই মেশিন দিয়েছে।’
উপজেলা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এবং নারী সহায়তাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা ইউএনও মো. তমাল হোসেন বলেন, অভাব, অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে গ্রামের নারীরা পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক নানা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। এসব নারীর জন্য সেবা নিশ্চিত করতেই নারী সহায়তাকেন্দ্রটি চালু করা হয়।