তখন বেঙ্গল থিয়েটারে কাজ করেন বিনোদিনী দাসী। সাহেবগঞ্জে নাটক করতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সাহেবগঞ্জ বেশ জংলা এলাকা। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যেতে হয় হাতি বা গরুর গাড়িতে। নাট্যদলটিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চারটি হাতি আর গরুর গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যাঁরা গরুর গাড়িতে যাবেন, তাঁরা রওনা হয়ে গেলেন ৩টার দিকে। বিনোদিনীর ইচ্ছে হয়েছে হাতিতে করে যাবেন। ছোট মানুষ, কখনো হাতিতে ওঠেননি, দেখেনওনি। তাই ইচ্ছেটার কথা জানালেন ছোটবাবুকে। বললেন, ‘আমি হাতির পিঠে যাব।’
ছোটবাবু বহুবার বারণ করলেন। কিন্তু বিনোদিনী গোঁ ধরে বসে থাকলেন।
গোলাপ নামের আরেক অভিনেত্রীকে বিনোদিনী বললেন, ‘দিদি, আমি তোমার সঙ্গে হাতিতে যাব।’
গোলাপ বললেন, ‘আচ্ছা, যাস।’
ঠিক হলো, গোলাপ যে হাতিতে যাবেন, তাতে জায়গা হবে বিনোদিনীর।
তিনটি হাতিতে চারজন করে সওয়ারি। গোলাপ, বিনোদিনী আর দুজন পুরুষ উঠলেন একটা হাতিতে। হাতি রওনা হলো। কিছু দূর যাওয়ার পর বুক শুকিয়ে গেল বিনোদিনী দাসীর। রাস্তাটি ক্রমে সরু হয়ে এসেছে। মোটে এক হাত চওড়া রাস্তা। দুই ধারে বুক পর্যন্ত বন। তাতে ধানগাছ না কোন গাছ, সেটা বুঝতে পারেন না তিনি। আর রাস্তার ধারে পানি।
চলতে চলতে একসময় শুরু হলো বৃষ্টি। তারপর ঝড়। সে এক ভয়ংকর অবস্থা। হাতিগুলো অস্থির হয়ে পড়ল। তারপর একটা বেতের বনে গিয়ে দাঁড়াল। শুরু হলো শিলাবৃষ্টি। হাতির ওপরে ছাউনি নেই, ঝড়, শিলায় বিধ্বস্ত হয়ে উঠলেন হাতির সওয়ারিরা। বিনোদিনী কাঁদতে লাগলেন। একটু পর কান্নায় যোগ দিলেন গোলাপ। মাহুতেরা চিৎকার করছিলেন, কিন্তু হাতি আর এগোচ্ছে না! হাতির ওপর থেকে যেন পড়ে না যান, তাই একজন মানুষ বিনোদিনীকে ধরে রাখলেন।
পরে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে যখন গন্তব্যে পৌঁছালেন, তখন নড়াচড়া করারও সামর্থ্য ছিল না বিনোদিনীর। তাঁকে ধরে ধরে নামানো হলো।সেদিন অভিনয়ের কথা ছিল, কিন্তু দুর্যোগের কারণে তা বন্ধ রইল।
সূত্র: বিনোদিনী দাসী, আমার কথা ও অন্যান্য রচনা, পৃষ্ঠা ২৪