সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় এবার ৩১৪ হেক্টর জমিতে কাঁকড়ার চাষ করা হয়েছে। মাত্র সাত বছর আগেও সাতক্ষীরায় জেলায় কাঁকড়ার চাষ হতো মাত্র ৫০ হেক্টর জমিতে। সে হিসেবে সাত বছরে জেলায় কাঁকড়ার চাষ বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ। সাতক্ষীরা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে উপকূলীয় এলাকায় প্রতি বছরই বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ বাড়ছে। অল্প জমিতে স্বল্প বিনিয়োগে কাঁকড়া চাষ তুলনামূলক সহজ ও লাভজনক হওয়ার কারণে প্রান্তিক চাষিরা এ কাজে ঝুঁকছেন। তা ছাড়া ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে বাগদা চাষে ব্যাপক ক্ষতি চাষিদের কাঁকড়া চাষে আগ্রহ বাড়াচ্ছে। কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন পর্যাপ্ত হলে সাতক্ষীরায় কাঁকড়া চাষের সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে দিত বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলার কাঁকড়া চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মড়ক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চিংড়ি মাছ উজাড় হওয়ায় কাঁকড়া চাষে ঝোঁক বেড়েছে তাঁদের।
শ্যামনগরের কাঁকড়া চাষি অরিন্দম দাস বলেন, আমি ১০ বিঘা জমিতে বাগদা চাষ করতাম। কিন্তু প্রতিবছরই লাভের বদলে ক্ষতি হতো বেশি। ক্ষতির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রতিবছরই ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ঘের। ফলে মাছ ভেসে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হতে হয়। তা ছাড়া চিংড়ির পোনার লবণ সহনীয় ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকা ও ভাইরাসে বাগদা মরে উজাড় হয়ে যায়। তাই তিনি এখন ছয় বিঘা জমিতে কাঁকড়া চাষ করছেন।
একই এলাকার রায়হান মল্লিক জানান, আমাদের এখানে বেশির ভাগ খাঁচা পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করা হয়। বিদেশে সফট শেল কাঁকড়ার চাহিদা বেশি। ৭০০ খাঁচায় কাঁকড়া চাষ করতে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় প্রায় পাঁচ লাখ টাকায়।
কলবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী শ্যামল পাল জানান, এ বছর কাঁকড়ার চাষ বেশ ভালো। এ গ্রেডের কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। বি গ্রেডের ৬৫০ এবং সি গ্রেডের কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। এখানকার কাঁকড়া সাধারণত ইউরোপ, আমেরিকা ও চীনে রপ্তানি করা হয় বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
তবে সুন্দরবন থেকে ধরে আনা কাঁকড়ার পোনা দিয়ে ঘেরে চাষ হয়। বছরের বেশ কিছু দিন জেলেদের ওপর সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে। বিশেষ করে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও জুন-জুলাইয়ে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ থাকে। এ কারণে সে সময় সমস্যায় পড়তে হয় চাষিদের।
সার্বিক বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘সাতক্ষীরায় কাঁকড়া চাষ সম্ভাবনাময় একটা খাত। সফট শেলের চাহিদা বেশি। কাঁকড়া প্রসেসিং প্ল্যান্ট রয়েছে শ্যামনগরে, যার মাধ্যমে কাঁকড়া সরাসরি বিদেশে যাচ্ছে। ঝুঁকি কম বলে অনেকেই এ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে সমস্যা হলো পোনা নিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘চাষিদের পোনা সংকট কাটাতে হ্যাচারি স্থাপন প্রয়োজন। সরকারিভাবে দেশে শুধু কক্সবাজারে হ্যাচারি রয়েছে। আমরা বেসরকারিভাবে হ্যাচারি স্থাপনে উৎসাহিত করছি।’