গমের কাঁচা গাছ কেটে বাজারে বিক্রি করছেন কৃষকেরা। গমের প্রতিটি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী বাজারসহ আশপাশের বাজারে এমন দৃশ্য কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে। এতে গমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
গবাদিপশুর গণখাদ্যের দাম বাড়ায় ও চারণভূমির সংকটের কারণে বাজারে কাঁচা গম গাছের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ছাগল ও গরুর জন্য কাঁচা ঘাস হিসেবে কিনে খাওয়াচ্ছেন খামারিরা। বিক্রেতারা বলছেন ১০০ আঁটি বাজারে তুলতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে নিমেষেই। চাষিদের পাশাপাশি পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতাও দেখা গেছে কাঁচা গমের গাছ বিক্রি করতে।
গত শুক্রবার দুপুরে বালিয়াডাঙ্গী বাজারের মেইন রোডের মাছ বাজার এলাকার একটি নছিমনে ১০০ আঁটি কাঁচা গমের গাছ বিক্রি করতে নিয়ে আসেন কুশলডাঙ্গী গ্রামের নওশাদ আলী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, নেকমরদ এলাকার এক গম চাষির দুই বিঘা কাঁচা গমের খেত তিনি কিনেছেন ২৬ হাজার টাকা দিয়ে। ১ টাকা দরে প্রতি আঁটি মজুরি দিয়ে প্রতিদিন শ্রমিকদের কাছে প্রতিদিন ১ হাজার আঁটি কেটে বাজারে বিক্রি করেন তিনি। দুই বিঘা জমিতে ৪ হাজার ২০০ আঁটি হবে। যার বাজার মূল্য ৪২ হাজার টাকা। শ্রমিকদের মজুরি দিয়েও তাঁর লাভ হবে ৪ হাজার টাকা।
তিনটি কাঁচা গমের আঁটি কিনেছেন ধনিবস্তী গ্রামের গোলাম রসুল। তিনি জানান, আগে চারণ ভূমিতে ছাগলের ঘাস খাওয়ানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন সেটা নেই। প্রতিটি জমিতে ফসল আবাদ হচ্ছে। ছাগল পালনে খুব অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কাঁচা গমের গাছ কিছুটা উপকারে আসছে তাঁদের।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে গম উৎপাদনে চাষাবাদ, সার, কীটনাশক, সেচ খরচ ও গম বীজ দিয়ে সর্বোচ্চ খরচ হবে ৭ হাজার টাকা। গম পাকার পর কেটে সেই জমির গম বাজারে বিক্রির ঝামেলা ও দাম নিয়ে শঙ্কা থাকায় কাঁচা গম বিক্রি করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে এমনিতেই বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।
তবে এভাবে কাচা গম কেটে বিক্রির ফলে গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এমনিতেই উপজেলাটিতে চলতি মৌসুমে গমের আবাদ কম হয়েছে। গেল বছর উপজেলায় গম চাষ হয়েছিল ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে গমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাঁচা গম কেটে বিক্রির বিষয়টি নজরে আসেনি। তবে এটি কৃষকেরা কেন করছে আমার জানা নেই। কাঁচা গমের গাছ বিক্রি করলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাঘাত হবে। কৃষকেরা কাঁচা গমের গাছ কেটে বিক্রি যেন না করে এই জন্য তাঁদের উৎসাহ দেওয়া হবে।’ মাঠ পর্যায়ে সকলের সঙ্গে এ বিষয় কথা বলবেন বলে জানান তিনি।