‘কুড়িতে বুড়ি’ কিংবা ‘বিয়ের পরে বাচ্চা নিয়ে জীবন কাটাও’ এসব গল্প ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছে আমাদের দেশে। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেট ছড়িয়ে যাওয়ার পর নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার হার দিন দিন বাড়ছে। নারী উদ্যোক্তাদের সফলতার গল্প একসময় ছিল শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক। কিন্তু এখন খাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি ও ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহ করার প্রায় পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা সফল নারীদের দেখা যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বেশ দক্ষতার সঙ্গে তাঁরা করে চলেছেন নিজেদের পছন্দের কাজ। ঢাকার বাইরের তেমনই একজন সফল উদ্যোক্তা রুনা আহ্মাদ।
নোনা ইলিশ, নাগা মরিচ, রসুন, কালিজিরা, করমচা, আপেল, গরুর মাংসের আচারসহ প্রায় ৩০ রকমের মুখরোচক আচার তৈরি ও বিক্রি করছেন রুনা আহ্মাদ। সংসার ও সন্তান সামলে অনলাইনে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। তাঁর এ পথে এসেছে বিভিন্ন চড়াই-উতরাই। তবুও হার না মেনে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বসে রুনা আহ্মাদ প্রায় ৩০ রকমের আচার তৈরি ও বিক্রির কাজ করে চলেছেন। এ ছাড়া তিনি তৈরি করেন ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই, শনপাপড়িসহ মজাদার দেশীয় অনেক খাবার।
ফেসবুকের ই-কমার্স গ্রুপ ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স’-এর একজন সক্রিয় সদস্য রুনা আহ্মাদ। এখানে যুক্ত হওয়ার পর নিজেকে আরও ঝালিয়ে নিতে অনলাইন আড্ডা, ওয়ার্কশপ ও মাস্টার ক্লাসের মতো অনলাইন ইভেন্টগুলোতে সক্রিয় অংশ নিতেন তিনি। কয়েক মাসেই তাঁর জীবন পাল্টে যায়। মাত্র তিন মাসে তিনি অনলাইনে আচার বিক্রি করে আয় করেন এক লাখ টাকা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
‘নারীদের জীবন শুধু ঘর-সংসার করে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য নয়। তাঁদের আরও কিছু করার আছে। ঘরের বাইরে গিয়েই শুধু কাজ করা যায়, এ ধারণাটাও ঠিক নয়। ঘরে থেকেও নিজেকে স্বাবলম্বী করার সুযোগ আছে।’
রুনা আহ্মাদ, ই-কমার্স এক্সপ্রেস, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা
রুনা আহ্মাদ জানান, প্রতিবন্ধকতা বলতে যা বোঝায়, পরিবার থেকে তেমন প্রতিবন্ধকতা আসেনি। তাঁর স্বামী আহ্মাদ স্বাধীন সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন সব সময়। তবে শুরুতে প্রতিবেশী ও স্বজনদের কাছ থেকে কিছু কটাক্ষ ও অসহযোগিতামূলক আচরণ পেয়েছেন রুনা। কিন্তু কাজের প্রতি তাঁর মনোযোগ ও ভালোবাসা দেখে সবাই ধীরে ধীরে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়।
রুনা আহ্মাদ মনে করেন, প্রযুক্তির কল্যাণে এখন সবকিছুই অনেক সহজ। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছা, শ্রম ও মেধার প্রয়োগ। তাহলেই নারীরা একটি স্বকীয় পরিচিতি ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পাবেন। সেই সঙ্গে দেশ ও সমাজের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক পথ তৈরিতে তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করতে পারবেন। ইতিমধ্যে রুনা আহ্মাদ তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন ‘উই’ গ্রুপ থেকে লাখোপতি নারী উদ্যোক্তার সম্মাননা। পেয়েছেন ‘নারায়ণগঞ্জ ফুড ফেস্টিভ্যাল-২১’-এর সেরা আচার প্রস্তুতকারক সম্মাননা।