মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট ছিলেন একজন ইংরেজ লেখিকা ও দার্শনিক। তিনি নারীবাদী দর্শন প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হিসেবে খ্যাত। মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট ১৭৫৭ সালের ২৭ এপ্রিল লন্ডনের স্পিটাফিল্ডসে জন্মগ্রহণ করেন। সচ্ছল পরিবারে জন্মালেও মদ্যপ বাবার কাছে প্রায়ই তাঁর মা এবং তাঁকে নির্যাতনের শিকার হতে হতো। বাবার পুরুষতান্ত্রিক চিন্তার কারণে তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের সুযোগ হয়নি। তারপরেও তিনি নিজ উদ্যোগে পড়াশোনা করে স্বশিক্ষিত হন।
আঠারো শতকের শুরুর দিকে নারীরা প্রাকৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে পুরুষের নিচে—এমন একটা ধারণা সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রচলিত ছিল। শিল্প-কলকারখানার বিকাশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব হলেও কাজের ক্ষেত্রেও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য ছিল। নারীরা ঘরের কাজ, সন্তান লালন-পালনে যুক্ত থাকবে আর রাজনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনা, অর্থনীতি এসবের কাজে যুক্ত থাকবে পুরুষ—এমনই একটা সমাজনীতি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সে ভাবনার বিরুদ্ধে যে কয়েকজন নারী প্রথম লেখা শুরু করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট।
তিনি মাত্র ৩২ বছর বয়সে ‘এ ভিন্ডিকেশন অব দ্য রাইটস অব উইমেন’ বইটি লেখেন। এটি এখনো নারীদের অধিকার আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ এডমান্ড বার্কের ‘রিফ্লেশন অন দ্য ফ্রেঞ্চ রেভল্যুশন’ বইটির প্রতিক্রিয়া হিসেবে এটি লেখেন।
এক অসাধারণ জীবনের অধিকারী ছিলেন মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট। হাজার প্রতিকূলতার মধ্যেও লড়াই চালিয়ে গেছেন। কৈশোর থেকে নারীদের অধিকারের যে ভাবনা মনে গেঁথেছিলেন, তার বাস্তব রূপ দিতে পিছপা হননি। তিনি ২৫ বছর বয়সে তাঁর দুই বোন এবং একজন বন্ধুকে নিয়ে ছোট মেয়ে বাচ্চাদের জন্য স্কুল চালু করেন। এটা একটা বেশ বড় আর্থিক চ্যালেঞ্জ ছিল। তবু তিনি থেমে থাকেননি।
দুইবার বিয়ে হয়েছিল মেরির। প্রথমজন মার্কিন ঔপন্যাসিক ও ব্যবসায়ী গিলবার্ট ইমলে আর দ্বিতীয়জন হলেন উইলিয়াম গডউইন, যিনি একজন লেখক ও দার্শনিক ছিলেন। ১৭৯৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট।