২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের নিম্নমান সহকারী পদে নিয়োগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু তাহের। মৌখিক পরীক্ষাও ভালো দিয়েছেন তিনি। তাঁর আশা ছিল, চাকরিটা পেলে পরিবারের হাল ধরবেন; কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার প্রায় পাঁচ বছরেও সেই ফল প্রকাশ হয়নি।
শুধু আবু তাহের নন, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তাঁর মতো ৮৯০ চাকরিপ্রার্থীর ফল ঝুলে রয়েছে অজানা কারণে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে নিম্নমান সহকারী পদে লিখিত পরীক্ষা হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা ওই বছরের ডিসেম্বরে মৌখিক পরীক্ষা দেন; কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই ফলাফল এখনো প্রকাশিত হয়নি। চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্ন, বন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়োগের নামে কোনো দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে না তো। তা না হলে ফল প্রকাশ করতে এতদিন লাগছে কেন?
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৫ বছরেও ফল প্রকাশ না হওয়া মানে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ থেকে বোঝা যায়, কেউ কেউ নিয়োগে বাণিজ্য করার জন্য ফল আটকে রাখছেন। এতে যারা ভালো পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁরা নিয়োগ পাবেন কি না সন্দেহ আছে।’
এই নিয়োগ ঘিরে দুর্নীতি হচ্ছে দাবি করে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মানববন্ধনও করেন চাকরিপ্রার্থী ও নগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ওই সময় তাঁরা অভিযোগ করেন, নিয়োগ পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার প্রার্থীদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘সামান্য একটা নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রায় ৫ বছরেও প্রকাশ না হওয়া মানে সেখানে শুভংকরের ফাঁকি চলছে। এখনো ফল প্রকাশ না হওয়ার কারণ জানতে চাই বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। যৌক্তিক কারণ বলতে না পারলে, সামনে আমরা আবারও আন্দোলনে যাব।’
চট্টগ্রাম বন্দরে ‘নিম্নমান সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর’ পদে ৪১৬ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ২০১৭ সালে। যোগ্যতা ছিল কমপক্ষে এইচএসসি পাস। এই পদে আবেদনের পর যাচাই-বাছাই করে প্রায় ২৩ হাজার পরীক্ষার্থীকে লিখিত পরীক্ষার সুযোগ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ আর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৮৯০ জন। তাঁদের মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে।
চাকরিপ্রার্থী আবু তাহের বলেন, ‘চাকরির বয়সও প্রায় শেষ। ভালো পরীক্ষা দিয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। মৌখিক পরীক্ষাও দিয়েছি; কিন্তু ৫ বছরেও সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়নি। কী করব, বুঝতে পারছি না। আমরা চরম উৎকণ্ঠায় আছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, নিয়োগ ঘিরে মন্ত্রী থেকে সংসদ সদস্য পর্যন্ত তদবির করছেন। সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুপারিশও আছে। সে জন্য এই নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ঝামেলায় আছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মো. মমিনুর রশিদ বলেন, ‘নানান কারণে ফল প্রকাশ হয়নি। ফল প্রকাশ হওয়ার বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।’