দেশে হতদরিদ্র পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে সরকারি চাল দেওয়ার কর্মসূচি চালু আছে। বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের ছেলে এবং অনেক সচ্ছল পরিবার এমনকি দোতলা বাড়ির মালিকের নামও দেওয়া হয়েছে এই ধরনের সুবিধাভোগীর তালিকায়। তালিকাটি তৈরি করা হয় গত ৫ সেপ্টেম্বর। চেয়ারম্যান ছাড়াও ইউপি সচিব এবং বেতাগীর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোলাম মাওলার যৌথ সই আছে তালিকায়।
জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া এই তালিকা ধরেই প্রতিবছরের মার্চ থেকে নভেম্বর—এই পাঁচ মাস ১০ টাকা কেজি দরে সরকারি চাল বিতরণ করা হয়। চাল-চুলাহীন হতদরিদ্র পরিবারগুলোতে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচিতে।
প্রশাসন সূত্র জানায়, বেতাগীর সদর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির সেপ্টেম্বর মাসে নতুন ৪৫ জন সুবিধাভোগীর নাম হতদরিদ্রদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এ তালিকার ১০ নম্বর ক্রমিকে চেয়ারম্যানের ছেলে মো. গোলাম শাহরিয়ার মনির নাম আছে, তাঁর পেশা দেখানো হয় দিনমজুর। শাহরিয়ার বেতাগী সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
তালিকায় নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. গোলাম শাহরিয়ার মনির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার কোনো ইনকাম নেই। এটা প্রধানমন্ত্রীর একটা খাদ্য কর্মসূচি। এ জায়গায় যে কারও নাম থাকতে পারে। আমার চেয়ে বড় বড় ফ্যামিলির নামও এ জায়গায় আছে।’
যোগাযোগ করা হলে মনিরের বাবা মো. হুমায়ুন কবির তালিকায় ছেলের নাম থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, অন্য একজন দিনমজুরকে সরকারি চাল দিতে ছেলের নাম দেওয়া হয়।
তালিকায় ৪০ নম্বরের নাম আছে সামসুল হকের ছেলে মোখলেছুর রহমানের। মোখলেছুর পেশায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপণন কর্মী। তাঁর স্ত্রী স্থানীয় কিসমত করুণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সদরের কেওড়াবুনিয়া গ্রামে তাঁদের একটি দোতলা বাড়ি আছে। মোখলেছুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, এ জন্য তালিকায় নাম উঠেছে।’
একইভাবে তালিকার ৩৪ ও ৩৫ নম্বরে আছে আপন দুই বোন আমেনা আক্তার মনি এবং ফাতেমা আক্তার লাকীর নাম। তাঁরা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তাইজুল ইসলামের খালা। তাঁদের বাবার নাম আবদুল আজিজ হাওলাদার, যার নিজের মালিকানায় ঘরবাড়ি এবং চাষাবাদের জমি আছে। এই দুই নারী স্বামীদের নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন, গ্রামে খুব কমই আসেন বলে এলাকাবাসী জানান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, চেয়ারম্যান-মেম্বারের পছন্দের লোকদের নাম সস্তায় সরকারি চাল পাওয়ার তালিকায় তোলা হয়েছে। টাকাপয়সার বিনিময়ে সচ্ছল পরিবার এবং দলীয় লোকজনের নাম তালিকায় দেওয়া হয় বলে জানান তাঁরা।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের নামের তালিকায় স্বজনপ্রীতির কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত সাপেক্ষে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।