নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের। কৃষিনির্ভর জেলা দিনাজপুর ও আশপাশের মানুষ এ অবস্থা থেকে বের হতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তিন বেলা ডাল-ভাতের নিশ্চয়তাও এখন অনিশ্চিত। গরিবের আমিষ মসুর ডাল এখন আর নিম্নবিত্তের নাগালে নেই। নতুন চালের বাজারেও কোনো সুখবর নেই। বাজারে চলছে পুরাই তেলেসমাতি।
বেলাল হোসেন (৫৫) একটি কয়েল কোম্পানির মার্কেটিং ম্যানেজার। তাঁর আয় খুব বেশি না হলেও যা বেতন পেতেন, তা দিয়ে দুই ছেলের পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে সংসার চলে যেত। গ্রামে সামান্য জমি থাকায় চালটা সেখান থেকেই পেতেন। সংসারে সচ্ছলতা না থাকলেও কখনো হাত পাততে হয়নি তাঁকে। কিন্তু করোনায় বিক্রি কমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় কয়েল কোম্পানিটি। পাঁচ মাস তিনি কর্মহীন থেকে সন্তানের স্কুলের বেতন দিতে না পেরে বাধ্য হয়ে মওকুফের আবেদন করেছেন।
দিনাজপুরের একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত সাইফুল আলম (ছদ্ম নাম)। ১১তম গ্রেডের কর্মচারী তিনি। মাস শেষে সব মিলিয়ে ৩১ হাজার টাকা বেতন তোলেন। বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও গ্যাস বিল মিলিয়ে বেতনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চলে যায়। গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবার ওষুধসহ অন্যান্য খরচের জন্য মাসে বেতনের একটি অংশ দিতে হয়। এ ছাড়া মুদি দোকানের বকেয়া চুকিয়ে যখন বাড়িতে ফেরেন তখন পকেট ফাঁকাই বলতে হয়। এটা দিয়ে সারা মাসের খরচ মেটাতে গিয়ে হিসাব মেলে না কোনো মাসেই।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা হয়তো কোনোমতে চলে যাচ্ছি, কিন্তু যাঁরা নিচের গ্রেডে চাকরি করেন, তাঁদের অবস্থা শোচনীয়।’
জেলার সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার বাহাদুর বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে আটাশ চাল ৫৪ টাকা, মিনিকেট ৫৮-৬০, সয়াবিন তেল ১৫৫, মসুর ডাল ১১০, আটা ৩৪ ও চিনি ৮০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শুধু চাল, ডাল কিংবা তেল নয়, শীতের মৌসুমে সবজির ভরা বাজারেও কোনো সবজির দামই ৪০ নিচে নয়।