এক সময় শিশু-কিশোরের মুখে শোনা যেত, `গাব খাব না খাব কি? গাবের মতো মিষ্টি কি?’ এমন ছড়া এখন আর শোনা যায় না। গ্রামের রাস্তার ধারে ঝোপ-ঝাড়ে জন্মে একাকী বেড়ে ওঠা গাব গাছের অভাব ছিল না একটি সময়।
গাছগুলোতে শত শত গাব পাকলেই গ্রামের শিশু-কিশোররা ভিড় জমাতো গাছ তলাতে। সবার হাতে থাকত মিষ্টি পাকা গাব। তেরখাদা উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরেও গাব গাছের দেখা মেলেনি। উপজেলা সদরের কাটেংগা বাজারে বহু পুরোনো একটি গাব গাছকে ঘিরে ওই স্থানটি গাবতলা নামে পরিচিতি পেয়েছে। সে গাছটিও এখন মৃতপ্রায়। দেশি ফলের গাছগুলো দিনে দিনে সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে বাহারি ফল-ফলাদির নাম পর্যন্ত।
তেরখাদা উপজেলায় প্রতিবছর কৃষি মেলার প্রদর্শনীতে দেশি ফলের খুব একটা প্রাধান্য থাকে না। বরং বিদেশি কমলা, আপেল, মালটা, আঙুর, নাশপাতি, বেদেনাসহ চেনা অচেনা বিভিন্ন ফলের সমাহার ঘটানো হয়। দেশি ফলের উৎপাদন ও সংরক্ষণে বাস্তবসম্মত কোনো পরিকল্পনা না থাকায় ফলের বাজার আজ হুমকির সম্মুখীন। অথচ সঠিক ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশীয় ফল রপ্তানি করে বিপুল বিদেশি মুদ্রা উপার্জন সম্ভব।
আতাফল, জব, আতনা- এসব এখন সচরাচর চোখে পড়ে না। নতুন প্রজন্ম শুধুই বই পুস্তকে ছবি দেখে। কিন্তু বাস্তবে দেখার সুযোগ হয় না। আর যা পাওয়া যায় তা হলো হাইব্রিড বিজে উৎপাদিত। এগুলোর প্রকৃত স্বাদ-ঘ্রাণ নাই বললেই চলে। একটি গাব সুস্বাদু ও মিষ্টি, একে বিলাতি গাব বলা হয়। পাকলে এর রং হয় গাঢ় লাল। খোসার ওপরটা মখমলের মত। ফলের ভেতরটা সাদা।
অন্যটিকে দেশি গাব বলা হয়। এটি খেতে হালকা মিষ্টি ও কষযুক্ত। কাঁচা ফল সবুজ এবং পাকলে হলুদ হয়ে যায়। পাকা ফলের ভেতরটা আঠালো। এটি সাধারণত খাওয়া হয় না, ভেষজ চিকিৎসায় এর কিছু ব্যবহার আছে। এই গাব হতে আঠা প্রস্তুত করা হয় যা মৎস্যজীবীরা তাদের জালে ব্যবহার করেন। দেশি গাবের প্রধান ব্যবহার এটাই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গাবগাছ আগে বসতবাড়ির আঙিনায় বেশি দেখা যেত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বেশি করে বসতঘর নির্মাণ করায় এবং গাব ফলের ভালো বাজার না থাকায় গাবগাছগুলো এখন বিলুপ্তির পথে।