জাতিসংঘে সদস্যপদ পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রাথমিক আবেদন করেছিল ১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে। কিন্তু চীন তাতে ভেটো দিয়েছিল। বাংলাদেশ ধৈর্য নিয়ে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছিল। ১৯৭৩ সালের আগস্টে ভারত-পাকিস্তান চুক্তি অনুযায়ী, পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের এবং অবাঙালিদের বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে যখন যুদ্ধবন্দীদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা হয়, তখন জাতিসংঘের সদস্যপদের জন্য বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। তারপরের মাসেই বাংলাদেশ জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন সম্মেলনে (ন্যাম) যোগ দেয়। সম্মেলনটি হয়েছিল আলজিয়ার্সে।
ন্যাম বা জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে জাতিসংঘে সদস্যপদের জন্য বাংলাদেশের পক্ষে কোনো প্রস্তাব গৃহীত হলে চীন সেটা উপেক্ষা করতে পারবে না—এটাই ছিল বাংলাদেশের কৌশল। শুরুতে সৌদি আরব, লিবিয়া ও জর্ডান এই প্রস্তাবে আপত্তি জানায়। ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের সহায়তায় কারও বিরোধিতা ছাড়াই প্লেনারিতে সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়।
১৯৭৪ সালের এপ্রিলে যুদ্ধবন্দী প্রত্যাবাসন প্রায় শেষ পর্যায়ে এসেছিল। এপ্রিলেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ষষ্ঠ বিশেষ অধিবেশনে যোগ দেওয়া চীনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হয় বাংলাদেশের। তাতে পরিষ্কার হয়, সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ পেয়ে যাবে। কোনো বিরোধিতার সম্মুখীন হবে না।
৭ জুন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ পাওয়ার আবেদন নিরাপত্তা পরিষদে শুধু সর্বসম্মতিক্রমে পাসই করা হয়নি, সেখানে চীনের প্রতিনিধি বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে।২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দেন। এটাই ছিল জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় উচ্চারিত প্রথম ভাষণ। সে সময় কয়েকজন সদস্য ভাষান্তরের ইয়ারফোন খুলে রেখেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমরা বাংলা ভাষার যে উচ্চারণ শুনছি, তাতেই অন্তর্গত আবেগের শক্তি উপলব্ধি করতে পারছি।’
সূত্র: কামাল হোসেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও ন্যায়ের সন্ধানে, পৃষ্ঠা ৩১৪-৩২১