চিকিৎসার জন্য হাসান হাফিজুর রহমান গেছেন মস্কোয়। সেখানে বন্ধু দ্বিজেন শর্মার সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয় হাসপাতালে। আলোচনা হয় মূলত সাহিত্য নিয়ে। ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্যবিচারে তাঁদের দুজনের মতের মিল সমসময়।
দ্বিজেন শর্মা প্রগতি প্রকাশনে কাজ করবেন বলে মস্কো গিয়েছিলেন ১৯৭৪ সালে, সে সময় হাসান হাফিজুর রহমান ছিলেন মস্কোয় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস অ্যাটাশে। তিনি বরণ করে নিয়েছিলেন দ্বিজেন শর্মাকে। সে সময় বিস্তর আড্ডা হয়েছিল। এরপর হাসান ফিরে গেছেন দেশে। তারপর মস্কো এসেছেন অসুস্থ শরীর সারিয়ে তোলার জন্য।
দ্বিজেন শর্মা বাংলাদেশের সাহিত্যের খবর পেতেন সংবাদ পত্রিকার সাহিত্যপত্রে, কারও কারও পাঠানো বইয়ের মাধ্যমে। সৈয়দ শামসুল হক যে শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী, সে ব্যাপারে দুই বন্ধু একমত। কোনো এক পত্রিকার ঈদসংখ্যায় ইমদাদুল হক মিলনের ‘পরাধীনতা’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হলে তাঁরা দুজনই তাঁর মধ্যে প্রতিভার আলো দেখতে পান।
হাসপাতালে থাকা অবস্থায় প্রথম দুই সপ্তাহে মনে হচ্ছিল এ যাত্রা পার পেয়ে যাবেন হাসান। মুখে সজীবতা ফিরে আসছিল। কিন্তু বমি আর হিক্কা একেবারে কাহিল করে দিচ্ছিল। পা ফোলা কমছিল না।
সে সময় দেশে ফেরার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতেন হাসান। দ্বিজেনকে বলতেন, ‘আগে কিছু শপিং করতে হবে। কত মানুষের জন্য যে কত কিছু নিতে হবে!’ ডলার শপ থেকে এটা-ওটা কেনার ইচ্ছে ছিল তাঁর।
কিন্তু একদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে গ্লিসারিন সাপোজিটরি দিয়ে টয়লেটে গিয়েছিলেন হাসান। হঠাৎ বমির আওয়াজ শুনে একই ওয়ার্ডের রোগী রঞ্জিত চক্রবর্তী বাথরুমে গিয়ে দেখেন হাসান জ্ঞান হারাচ্ছেন এবং এরপর সব শেষ।
শেষ বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন দ্বিজেন শর্মা। এপ্রিল মাসে টিউলিপ, নার্সিসাস, কারনেশন ছাড়া আর কোনো ফুল নেই। লাইলাক নেই। হঠাৎ হাসানের ‘শোকার্ত তরবারি’ কাব্যগ্রন্থের একটি পঙ্ক্তি মনে পড়ল দ্বিজেনের, ‘সমস্ত বাতিল মাটি হোক গোলাপের জননী।’ দ্বিজেন গোলাপই কিনলেন।
সূত্র: দ্বিজেন শর্মা, সমাজতন্ত্রে বসবাস, পৃষ্ঠা ১৮-২২