কাজী মোতাহার হোসেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম স্থান নিয়ে এমএ পাস করেছিলেন। বলা দরকার, সে বছর কেউ প্রথম শ্রেণি পাননি। সেটি ছিল ১৯২১ সাল। সে বছরই ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রদর্শক হিসেবে চাকরি শুরু করেন এবং একই বিভাগে ১৯২৩ সালে একজন সহকারী প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান।
সত্যেন বোস ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। শুধু ছাত্রদের নয়, তিনি শিক্ষকদেরও কিছু অঙ্ক দিয়ে টেস্ট করতেন। সেই অঙ্ক দেখতে মনে হতো খুব সোজা, কিন্তু করতে গেলেই বোঝা যেত কত ধানে কত চাল। একবার তিনি সাত বা আটটা প্রশ্ন দিয়ে বললেন, ‘পরের সপ্তাহে তোমরা আমাকে করে দেখাবে।’ কাজী মোতাহার হোসেন বাড়ি গিয়ে সন্ধ্যার সময় অঙ্ক নিয়ে বসলেন এবং রাত ১১টা কি সাড়ে ১১টার মধ্যে সব অঙ্কের সমাধান করে ফেললেন। পরদিন তিনি সত্যেন বোসের কাছে গিয়ে খাতা দেখালেন। সত্যেন বোস ভাবতেই পারেননি এত সহজে এগুলোর সমাধান করে ফেলবেন কাজী মোতাহার হোসেন। তখন তিনি মোতাহার হোসেনকে বললেন, ‘তোমার মাথা তো খুব পরিষ্কার! তোমার স্ট্যাটিসটিকস পড়া উচিত। তুমি কি স্ট্যাটিসটিকস পড়বে?’
কাজী মোতাহার হোসেন বললেন, ‘স্যার, পড়তে পারি, কিন্তু আমি গরিব মানুষ। মাসের মাইনে না পেলে তো সংসার চলে না।’
সত্যেন বোস বললেন, ‘এটা তো ঠিক কথা। ঠিক আছে, আমি তোমাকে ছুটি দেব উইথ পে। আর ভ্যাকেশন এসে যাচ্ছে, আমি তোমাকে মহলানবিশের কাছে নিয়ে যাব।’
সত্যিই কলকাতায় প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ‘আমার ছোট ভাই’ হিসেবে। মহলানবিশ তাঁকে খুব সাহায্য করেছেন এবং লাইব্রেরি থেকে যেকোনো বই নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
এটাই ছিল কাজী মোতাহার হোসেনের পরিসংখ্যানে বিদ্যা লাভের রহস্য।
সূত্র: সরদার ফজলুল করিম, স্মৃতিসমগ্র, দ্বিতীয় খণ্ড পৃষ্ঠা ২৭৬