মূলত রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হলেও, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবে সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিকের সুনাম আছে। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে ১৯৩৯ সালের ২৪ জুন জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
দেশ বিভাগের পর সাইফউদ্দিন মানিক ১৯৪৮ সালে পিতামাতার সঙ্গে ঢাকায় এসে গোপীবাগে বসবাস শুরু করেন। তিনি ঢাকার মুসলিম গভর্নমেন্ট হাইস্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষাজীবন কাটিয়েছেন। স্কুলজীবন থেকেই খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অনুরাগী ছিলেন। তিনি ছিলেন ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
গত শতকের ষাটের দশকে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে যে ছাত্র-গণ-আন্দোলন গড়ে ওঠে, তার সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। একপর্যায়ে তিনি আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা হয়ে ওঠেন। তিনি ১৯৬৫ সালে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়নের এক অংশের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন ১১ দফা কর্মসূচির অন্যতম প্রণেতা, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা এবং উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক।
১৯৬৯ সালে তিনি শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দেন। ডেমরার বাওয়ানী পাটকল শ্রমিক ইউনিয়ন তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করে। পরবর্তীকালে তিনি দীর্ঘ সময় ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নামের শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদেরও তিনি ছিলেন অন্যতম নেতা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফউদ্দিন মানিক ছিলেন ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের নিয়ে গঠিত যৌথ গেরিলা বাহিনীর অন্যতম সংগঠক। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালে ‘গণফোরাম’ নামের রাজনৈতিক দল গঠনে তিনি উদ্যোগী ভূমিকা নেন এবং ১৯৯৬ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি এই দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।