হোম > ছাপা সংস্করণ

মিরাজের প্রেক্ষিত তাৎপর্য ও শিক্ষা

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা

মিরাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বগমন। মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা, সেখান থেকে সাত আসমান পাড়ি দিয়ে সিদরাতুল মুনতাহা, তারপর মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মহিমান্বিত ভ্রমণকেই ইসলামে মিরাজ বলা হয়। এই সফরের তারিখ নির্ধারণে বিভিন্ন মত বর্ণিত হলেও নবুয়তের একাদশ বছরে মিরাজ হওয়ার মতোই শক্তিশালী। মিরাজের ঘটনার রয়েছে প্রেক্ষিত, তাৎপর্য ও শিক্ষা। 

মিরাজের প্রেক্ষিত
ইসলাম প্রচারের শুরু থেকেই রাসুল (সা.) ও তাঁর অনুসারীদের ওপর নেমে আসে নানা অত্যাচার, জুলুম ও নির্যাতন। কিছু মুসলমান একপর্যায়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। কুরাইশরা তাঁদের ফিরিয়ে আনতে আবিসিনিয়ার বাদশার কাছে লোক পাঠিয়ে ব্যর্থ হলে সিদ্ধান্ত নেয়, মুহাম্মদ (সা.), তাঁর গোত্র বনু হাশিম ও তাদের সাহায্যকারীদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে। এই মর্মে চুক্তিপত্র লিখে কাবাগৃহের দেয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে আবু তালিব নিজের গোত্রসহ শিয়াবে আবু তালিবে আশ্রয় নেন। সেখানে বনু মুত্তালিব মুমিন-কাফির সবাই দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাতে থাকেন। নবুয়তের দশম বছরের শাওয়াল মাসে চাচা আবু তালিব ইন্তেকাল করেন। এর কয়েক দিন পর সহধর্মিণী খাদিজা (রা.) ইন্তেকাল করেন। তাঁদের ইন্তেকালে রাসুলুল্লাহ (সা.) খুবই বিচলিত হন। আবু তালিব ঘরের বাইরে আর খাদিজা (রা.) ঘরে রাসুল (সা.)-কে শক্তি ও সাহস জোগাতেন। ইতিহাসে বছরটি শোকের বছর হিসেবে পরিচিতি পায়। এর কিছুদিন পর রাসুলুল্লাহ (সা.) তায়েফে গিয়ে সীমাহীন লাঞ্ছনার শিকার হন। এসব দুঃখ-কষ্টের ঘটনায় সান্ত্বনা দিতে মহান আল্লাহ তাঁকে মিরাজ নামক এক মর্যাদাপূর্ণ ভ্রমণের মাধ্যমে সম্মানিত করেন। (সিরাতুল মুস্তফা: ১ / ২৮৮-২৮৯) 

মিরাজের তাৎপর্য
মিরাজের ঘটনা কয়েকটি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। যথা—
এক. আল্লাহর পথে নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার প্রতিদান সম্মান, উচ্চাসন ও ঊর্ধ্বগমনই হয়ে থাকে।

দুই. সব নবী-রাসুলের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছে। মসজিদে আকসায় সব নবী-রাসুল সমবেত ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁদের সবাইকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন এবং নামাজে ইমামতি করলেন। (সিরাতুল মুস্তফা, ১/ ২৯৫-২৯৬)

তিন. নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর গুরুত্ব বোঝাতেই মহান আল্লাহ ইসলামের অন্যান্য নির্দেশনা অহির মাধ্যমে পাঠালেও আসমানে নিজের কাছে ডেকে একান্তে নামাজ দান করেছেন। 

মিরাজের সত্যতা
মিরাজের বিষয়টি পবিত্র কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিস থেকে প্রমাণিত। কাজেই মিরাজের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ করার অবকাশ নেই। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মিরাজের সত্যতা এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েই ইসলামে সিদ্দিক (সত্যায়নকারী) উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। মিরাজের বর্ণনায় আল্লাহ বলেন, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে (মুহাম্মদ) রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল:

১) মিরাজের ঘটনাপ্রবাহ
মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা, সেখান থেকে শুরু হয় ঊর্ধ্বগমন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে নিয়ে যাওয়া হয় সাত আসমানের ওপরে। পথে প্রথম আসমানে আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে ইয়াহইয়া ও ইসা (আ.), তৃতীয় আসমানে ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে ইদরিস (আ.), পঞ্চম আসমানে হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে মুসা (আ.) ও সপ্তম আসমানে ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সেখানে রাসুল (সা.) সিদরাতুল মুনতাহা, জান্নাত, জাহান্নামসহ আল্লাহ তাআলার অসংখ্য নিদর্শন দেখেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সে (মুহাম্মদ) তাকে (জিবরাইলকে) আরেকবার দেখেছিল সিদরাতুল মুনতাহার নিকট। যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত।’ (সুরা নাজম: ১৩-১৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.) মহান আল্লাহর দর্শন লাভে ধন্য হন। আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তিনি যা দেখেছেন, তাঁর অন্তঃকরণ তা অস্বীকার করেনি এবং নিশ্চয়ই তিনি তাঁকে আরেকবার দেখেছেন’ আয়াতটির মর্মার্থ হলো—রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর রবকে অন্তঃকরণ দ্বারা দুবার দেখেছেন।’ (মুসলিম: ৪৫৫) 
রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর সামনে সব ইবাদত উপস্থাপন করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সালাম, রহমত ও বরকত প্রদান করেন। 

মিরাজের প্রাপ্তি
মিরাজের বড় প্রাপ্তি হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। সঠিক, সুন্দর ও একনিষ্ঠ হয়ে নামাজ আদায় একজন মানুষকে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে সক্ষম করে। মিরাজের সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বিভিন্ন নিদর্শন দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে নানা পাপকাজের শাস্তিও রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে সবই জানিয়ে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে ইমানের দৃঢ়তা অর্জনের অনুপ্রেরণা এবং পাপ থেকে বাঁচার মহান শিক্ষাও যোগ হয়েছে মিরাজের প্রাপ্তির তালিকায়।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ