নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেই শহীদ মিনার। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারছেন না। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁদের যেতে হয় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে। গত বছর খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মিঠুন বলেন, ‘ভাষাশহীদদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা মাতৃভাষা বাংলা পেয়েছি। আর ভাষাশহীদদের স্মৃতি ও আত্মত্যাগের সঠিক ইতিহাস প্রজন্মের কাছে ধরতেই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। শহীদ মিনার শুধু একদিন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নয়, বরং বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন ভাষাশহীদদের স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকবে।’
সরেজমিন জানা যায়, উপজেলা সদরসহ আটটি ইউনিয়নে ২০৪টি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কলেজ রয়েছে ৬টি, স্কুলের সঙ্গে কলেজ রয়েছে ২টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৪টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৮টি ও মাদ্রাসা রয়েছে ২৬টি। বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজ ছাড়া বাকি কলেজগুলোতে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি আজও। ৪৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১৪টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। ১২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯টিতে শহীদ মিনার থাকলেও উপজেলার ২৬টি মাদ্রাসার কোনোটিতেই শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি।
নিয়ামতপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, যা বর্তমানে সরকারি কলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার হলেও এখানে নেই শহীদ মিনার।
কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মমতাজ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘কলেজ সরকারীকরণ প্রক্রিয়া চলমান থাকায় আমাদের নিজস্ব অর্থে শহীদ মিনার নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। কলেজ যেহেতু সরকারের, তাই এখন সরকারের উদ্যোগেই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাষাশহীদদের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন। অচিরেই শহীদ মিনার নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’