ভেসে উঠল কিশোরীর লাশ’, ‘গৃহবধূর গলাকাটা লাশ উদ্ধার’, ‘কিশোরীকে ধর্ষণ মামলায় দুজন গ্রেপ্তার’। এ ছাড়া হয়তো আরও খবর আছে, যা পত্রিকায় ছাপা হয়নি। আমরা এগিয়ে যাওয়ার যত গল্পই বলি না কেন, সব মানুষের জন্য নিরাপদ দেশ যে এখনো গড়ে তুলতে পারিনি, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও বহু পথ আমাদের হাঁটতে হবে। পিছিয়ে পড়া অবস্থা থেকে নারীকে এগিয়ে নিতে সরকার বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ যেমন নিয়েছে, তেমনি নারী নির্যাতন বন্ধ করার জন্য কিছু আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে। তারপরও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি, সেটাই সত্য।
নারীর অগ্রগতির পথে এখনো নানা ধরনের অন্তরায় আছে। বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। দেশকে সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত করতে না পারলে নারীর পক্ষে সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। অভিজ্ঞতা থেকে এটা আমরা বলতে পারি যে নারীরা এগিয়ে গেলে দেশও এগিয়ে যাবে। তাই সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দেশের সব গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তিকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই এবং রাজনৈতিক সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইকে অভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে হবে।
ক্ষমতার রাজনীতির আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থেকে ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধ যারা সংঘটিত করে, তাদের সাধারণ শাস্তির আওতায় আনা যায় না। বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কার্যত বিচারহীনতার নামান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিকমতো ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়া, পারিবারিক ও সামাজিক মনোভঙ্গি, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ এবং সাক্ষ্য আইনের জটিলতার কারণেও নির্যাতনের শিকার নারী ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়ে থাকেন। শুধু কঠোর শাস্তির আইন করলেই হবে না, দ্রুততম সময়ে বিচার এবং রায় কার্যকর করার নজির স্থাপন করতে হবে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না—এটা কেবল মুখে বললে হবে না, সবার কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। সমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নারীর প্রতি অধিক সংবেদনশীল হতে হবে। নারী নির্যাতন বন্ধে সরকারের সদিচ্ছার বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট হতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা পুরুষদের হতে হবে মানবিক। নারী সম্পর্কে সব ধরনের ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নারীর পোশাক, নারীর চালচলনকে যাঁরা নারীর প্রতি সহিংসতার কারণ বলে মনে করেন, তাঁরা আসলে ভেতরে-ভেতরে একটি নির্যাতক মানসিকতাই পোষণ করেন। কোনো কুযুক্তি যেন নারীর অধিকার ও মর্যাদা হরণের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত না হয়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সরকারের।
নারীরা বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁদের পেছনে রাখার পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো এখন সময়ের দাবি। শিক্ষার সঙ্গে কাজের সুযোগেও সমতা আনতে হবে।