চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের সীতাকুণ্ড যে রাতের আঁধার ভেদ করে অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হবে, তা ওই এলাকার কেউ ক্ষুণাক্ষরেও ভাবেনি। দুর্ঘটনা কখনো বলেকয়ে আসেনা।
দুর্ঘটনা আকস্মিকই ঘটে। তবে পরিকল্পিত দুর্ঘটনাও হয় না, তা নয়। সাবোটাজ বা অন্তর্ঘাত বলে একটি কথা আছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোর লোডিং পয়েন্টের ভেতরে কীভাবে আগুন লাগে, তার কারণ এই সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত জানা যায়নি। কিন্তু ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ, গুরুতর আহত অনেকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহতের সংখ্যা চার শতাধিক।
আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, প্রথম দিকে আগুনের ভয়াবহতা সম্পর্কে বুঝে উঠতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও ডিপোর কর্মীরা। অবশ্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুততম সময়ে অকুস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করেন। রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে এবং এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একটি কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় এই বিস্ফোরণ ঘটে বলে মনে করা হচ্ছে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলের অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। এতে আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে।
সীতাকুণ্ডের এ ডিপোটি নেদারল্যান্ডস-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত। ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে চালু হওয়া এই ডিপো দেশের অন্যতম বড় ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) হিসেবে পরিচিত।
আগুনে ৪০০ থেকে ৫০০ কনটেইনার পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে। ডিপোতে নিয়মিত সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কনটেইনার থাকে। ডিপোটিতে রপ্তানি পণ্যও মজুত রাখা হতো বলে জানা গেছে। মজুত পণ্যের কতটুকু আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা পেয়েছে, তা জানা সম্ভব হয়নি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট কাজ করলেও রোববার ভোর ৫টার সময়ও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তখনো আগুন জ্বলছিল। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের আগুন নির্বাপণের ক্ষেত্রে পানির সংকটে পড়তে হয়েছে। তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও আগুন নেভানোর কাজ থেকে বিরত হননি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের নয় সদস্যও আছেন।
বিস্ফোরণে একজন পুলিশ কনস্টেবলের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আরও অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহত-নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এবং এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। তবে সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ড মাত্র কয়েক দিন আগে চাকরিতে যোগ দেওয়া মুমিনুল হকের মতো আরও অনেক মানুষের স্বপ্ন ছাই করে দিয়েছে। যেকোনো অগ্নিকাণ্ডে শুধু স্থাপনা পোড়ে না, সেই সঙ্গে পোড়ে মানুষের স্বপ্নও।
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বলার কথা এটাই যে দেশের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা যেহেতু আছে, সেহেতু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে এখনই সতর্ক হওয়া জরুরি। কারও উদাসীনতা ও অবহেলা যেন বড় ক্ষতির কারণ না হয়।