বাজেট স্বল্পতা, ভাষার ব্যবহার, গল্পের ধরন—সব মিলিয়ে টেলিভিশন নাটক সংকটময় অবস্থা পার করছে। নাটকের এই সংকটময় পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে ‘সাম্প্রতিক কাহিনিচিত্র ও অভিনয় বাস্তবতা’ শীর্ষক সেমিনারে। গতকাল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে অভিনয়শিল্পী সংঘের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এই সেমিনার। শুরুতেই নির্মাতা ও অভিনেতা তৌকীর আহমেদ একটি লিখিত অনুলিপি পাঠ করেন। সেখানেই উঠে আসে নাটকের বর্তমান সময়ের বাস্তবচিত্র।
টিভি নাটকে এখন বিষয়বস্ত বা প্রযোজনায় কিছু নতুনত্ব এলেও বেড়েছে সস্তা বিনোদন, অরুচিকর বিষয়বস্তু, ভাষার বিকৃতি, অশ্লীল ইঙ্গিতময় দৃশ্যের ব্যবহার। সঙ্গে অভিনয় জগতে হাজির হয়েছেন অ্যামাচার অভিনয়শিল্পীরা। তাঁদের ভিড়ে কাজ হারাচ্ছেন দক্ষরা। এছাড়া নাটকে কমেছে চরিত্রের সংখ্যা। টিভি নাটকে পারিবারিক চেহারা নেই বললেই চলে। এর ফলে গুটিকয় অভিনেতা বাদে বাদবাকি চরিত্রাভিনেতা হারিয়ে যাচ্ছেন।
কাহিনিচিত্রের এই সংকটের জন্য টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকেও দায়ী করেন বক্তরা। চ্যানেলের সংখ্যা, অনিয়ম, দুর্বলতা, দুর্নীতি দর্শককে বিমুখ করছে বলে উল্লেখ করা হয় সেমিনারে। এ কারণে মাত্র দু-দশকের মধ্যে সুদিন হারিয়ে ফেলেছে টিভি নাটক। তাদের জায়গা এখন দখল করে নিচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো। তবে সেখানেও সংকট কম নয়। নতুন তৈরি হওয়া এ মাধ্যমটিও কতদিন জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবে সেই বিষয়ে নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন অভিনয়শিল্পীরা।
টিভি নাটকের সংকটের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এই সমস্যাগুলো যাদের কাছে বললে সমাধান হবে তারা হল রাষ্ট্র বা সরকার। তাদের কাছে এই কথাগুলো পৌঁছায় না। আমরা অনেকবার তাদের কাছে চিঠি দিয়েছি। তারা সেগুলো পড়ার প্রয়োজন মনে করে না। আর টেলিভিশন চ্যানেলগুলো হয়ে গেছে ব্যবসাভিত্তিক। তার থেকে বড় ব্যাপার হলো, ব্যবসায়ীরা টিভি চ্যানেল চালু করছেন তাদের হাতিয়ার হিসেবে। এই কারণেই সমস্যাগুলোর উপর জোর দিচ্ছেন না। তবে সবাই মিলে চেষ্টা করলে এই অবস্থা থেকেও উত্তরন সম্ভব। সব সংগঠনকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।’
জাহিদ হাসান বলেন, ‘বর্তমান কাহিনিচিত্রের সংকটের দায় সবাইকে নিতে হবে। আগের দিনে রাজারা যেমন লাঠিয়াল রাখত, এখন ব্যবসায়ীরা নিজেদের সুরক্ষার জন্য টিভি চ্যানেল খুলছেন। তাতে হয়তো ব্যবসা হচ্ছে কিন্তু শিল্পচর্চা হচ্ছে কোথায়?’ গতকালের সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জয়া আহসান, আহসান হাবিব নাসিম, রওনক হাসান, অপূর্ব, চুমকি প্রমুখ।