হবিগঞ্জে তিন সপ্তাহ ধরে সাত উপজেলায় বন্যা হয়। এতে কৃষি, মৎস্য, যোগাযোগ ও শিক্ষা খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারি দপ্তরগুলোর তথ্যমতে, জেলায় বিভিন্ন খাতে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি করেছে বন্যা। তবে বন্যার পানি এখনো পুরোপুরি নামেনি। পানি নামার পর ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খাতের। জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৭ হাজার ৯০১টি খামার ও পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ৫ হাজার ৮৫৩ জন খামার মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ১৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এরপরই ক্ষতির হয়েছে যোগাযোগ খাতে। হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল দাবি করেন, জেলার ২৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক মেরামতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন অন্তত ১৫০ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বাছির জানান, বন্যায় ১৮৭ কিলোমিটার রাস্তা, ৬৮ মিটার ব্রিজ ও কালভার্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব মেরামতে প্রয়োজন ৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সদর উপজেলার গোপালপুরে ২০ মিটার, বানিয়াচংয়ের সুজাতপুর এলাকায় ৬০ মিটার খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙেছে। এ ছাড়া আজমিরীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর বাঁধের নিকলীরঢালায় ২০ মিটার, বদলপুর বাজারের নিকট ১০ মিটার এবং নবীগঞ্জের চরগাওয়ে বিবিয়ানা নদীর বাঁধের ৮০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে। এসব ভাঙন মেরামতে প্রায় ২ কোটি টাকার প্রয়োজন।
মৎস্য ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি উপজেলায় ক্ষতি হলেও কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে পুরো জেলা।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. আশেক পারভেজ জানান, বন্যায় ৮৮ হাজার ৫৪ মেট্রিকটন ধান ও সবজি এবং ২২৫ মেট্রিকটন অন্যান্য ফসল বিনষ্ট হয়েছে। জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ১৩০ জন।
একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা খাত। জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় জানিয়েছে, ৩৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ৯৪টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি।
জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘আগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, পরে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তালিকা তৈরি করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’