সুর করার ব্যাপারে একটা নিয়ম মেনে চলতেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। সুর করার জন্য বেশি সময় দিতেন না। গানের কথা দেখে স্বাভাবিকভাবে যে সুরটা মাথায় গেঁথে যায়, সেটাই করতেন। এরপর তিনি সেই সুর ফেলে রাখতেন সাত-আট দিন। সে সময় যদি কানে ভালো লাগত আগের সুরটা, তাহলে সেটাই অনুমোদন করতেন। আর যদি মনে হতো, নাহ, কানে খুব ভালো ঠেকছে না, তাহলে বাতিল করে দিতেন সেই সুর।
সে সময় বম্বেতে খুব ব্যস্ত তিনি। কিন্তু শাপমোচনে কাজ করার পর বাংলা সিনেমায় তাঁর ডাক আসছে বেশি। টাকাপয়সার হিসাবটাও বদলে গেছে। একবার নাম হয়ে গেলে তার সব কাজই প্রশংসিত হতে থাকে। কলকাতায় সেটা হচ্ছিল তখন। বম্বেতে ‘নাগিন’ ছবির গানগুলোর সুর হেমন্তের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও এনে দিয়েছিল।
হেমন্ত লক্ষ করেছিলেন, অনেক খেটে করা সুরও কখনো কখনো সুরকারকে ঠকায়, আবার ১০ মিনিটের মধ্যে করা সুরও বাহ্বা পায়; অর্থাৎ কুস্তি করে ভালো সুর বের করা যায় না।
সিনেমার গান লেখানোর ব্যাপারেও হেমন্ত একটা রীতি মানতেন। যেকোনো গানের প্রথম পঙ্ক্তি তিনি নিজে লিখে গীতিকারকে দিতেন। বাকিটা লিখতেন গীতিকার। হেমন্তের গীতিকার ছিলেন মূলত গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার। ‘তুমি যে আমার…’ গানের প্রথম পঙ্ক্তি লিখলেন হেমন্ত। এরপর গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার গানটা পুরো লিখে ফেলার আধঘণ্টার মধ্যেই সুর করে ফেললেন সুরকার। তারপর চলে গেলেন বম্বে। সেখানেও তো অঢেল কাজ পড়ে আছে। আবার যখন কলকাতায় এলেন, তখন তৈরি হলো ‘আজ দুজনার দুটি পথ…’। হেমন্ত সেটা সুর করলেন ১৫ মিনিটে। দুটো গানের রেকর্ডিং হয়ে গেল।
আশপাশের কেউ কেউ ফিসফিস করে বলছিল, এত তাড়াহুড়া করে কি সুর হয়? মজার ব্যাপার, ‘হারানো সুর’ যখন মুক্তি পেল, তখন এই গান দুটিই ছিল দর্শক-শ্রোতাদের মুখে মুখে। নিন্দাকারীরা আর কিছু বলতে সাহস পায়নি।
সূত্র: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আনন্দধারা