বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের ছোট ছোট অস্ত্রের চোরাচালান অব্যাহত রয়েছে, যা শান্তি নষ্টের মূল কারণ এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি। জাতিসংঘের গত সোমবারের নিরাপত্তা পরিষদের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছেন সংস্থাটির নিরস্ত্রীকরণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইউএনআইডিআইআর) পরিচালক রবিন গেইস।
মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্সেলো ইব্রার্ডের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিতর্কে গেইস বলেন, ‘প্রতিনিয়ত অস্ত্র চোরাচালানের অনেকগুলো বিকল্প রাস্তা তৈরি হচ্ছে। ফলে যেসব অঞ্চলে বা দেশে অস্ত্রের চালান পৌঁছাচ্ছে, সেখানে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে, বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা। এসব অঞ্চলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পরিমাণ বাড়ছে। এসব ঘটনায় নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে।’
অস্ত্র চোরাচালানের ফলে দেশে দেশে হতাহতের ঘটনা, বাস্তুচ্যুতি, মানসিক সমস্যা বাড়ার পাশাপাশি আক্রান্ত দেশের দীর্ঘমেয়াদি আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, মানবাধিকারবিষয়ক সেবা সরবরাহ ইত্যাদি ব্যাহত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় ইউএনআইডিআইআরের প্রতিবেদনে।
বিকল্প রাস্তা সম্পর্কে গেইস বলেন, চোরাচালানের একটি পথ বন্ধ করা হলে বিকল্প পথ তৈরি হচ্ছে। ফলে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের ঘটনা বাড়ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এসব ঘটনা ঠেকাতে হলে বহুমুখী উদ্যোগ নিতে হবে। অস্ত্র চোরাচালান কমাতে উৎপাদন থেকে শুরু করে বিক্রি ও সরবরাহের প্রতিটি ধাপে নজরদারি বাড়াতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
চোরাচালানের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নিয়মিত গবেষণা করে ইউএনআইডিআইআর। ২০১৫-২০ সালের মধ্যে ১১টি দেশের ২০০ নথি পর্যালোচনা করে চোরাচালানের বিকল্প পথ বন্ধের গুরুত্ব গবেষণা করে দেখে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানটি। অস্ত্রগুলো যেসব দেশে গিয়ে পৌঁছায়, তার পাশাপাশি যেসব দেশ এসব অস্ত্র তৈরি করে এবং যারা অস্ত্র চালানের সঙ্গে জড়িত তাদের নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে ইউএনআইডিআইআর।
গেইস জানান, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ‘অস্ত্র পাচার রুখতে যেসব দেশে অস্ত্র ঢোকে, তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সহায়তা ছাড়া অস্ত্র পাচারের ব্যবসা চলতে পারে না।’
জাতিসংঘের মহাসচিবকে লক্ষ করে গেইস বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অস্ত্র পাচার এবং তা বন্ধের করণীয় নিয়ে নানা প্রতিবেদন দিই। এখন কাজ হচ্ছে, শক্তিশালী প্রস্তাব পাস করা। জাতিসংঘকে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অস্ত্রের পাচার বন্ধ করে শান্তি, স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং উন্নয়ন অব্যাহত রাখা যায়।’
বৈশ্বিক অস্ত্রের পাচার মোকাবিলায় জাতিসংঘের পাশাপাশি প্রত্যেক দেশের নাগরিক সমাজেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ জোটের সদস্য মারিয়া পিয়া ডেভোটো।
পিয়া ডেভোটো বলেন, ‘যেসব জায়গায় চোরাচালানের অস্ত্র পৌঁছে, সেখানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা বেশির ভাগ সময় আমরা উপলব্ধি করতে পারি না।’ বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি জাতিসংঘের সদস্যরাও অস্ত্র পাচারে জড়িত জানিয়ে আর্জেন্টিনার এ প্রতিনিধি অস্ত্র পাচারকারী এবং গ্রহণকারী দেশ ও সংগঠনগুলোর ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ১৫০টি নাগরিক সমাজের জোটটি অস্ত্র ব্যবসার চুক্তি নিয়ে নানা ধরনের কাজ করে।