সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার কৃষি খেতে গেলেই চোখে পড়ে অবারিত সরিষার গাছ। যেদিকে দুই চোখ যায় শুধু হলুদের সমারোহ। অল্পদিনের আবাদে কৃষকদের বেশি একটা খরচ হয় না বলে তাঁরা সরিষার আবাদ করে থাকেন। আমন ধান ওঠার পর পর কৃষকেরা জমি চাষ করে, অনেকেই আবার ধানের জমিতে চাষ ছাড়াই ছিটিয়ে সরিষার আবাদ করে থাকেন।
এ বছর সরিষা চাষের শুরুর দিকে যখন কৃষি মাঠ সবুজ থেকে হলুদে রূপ নিচ্ছে ফুলে ফুলে, তখন কয়েক দিনের বৃষ্টি আর ঘন কুয়াশায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়। বিশেষ করে যেসব খেতের সরিষার গাছ ভেঙে যায় ওই সব খেতের কৃষকেরা বেশ ক্ষতির আশঙ্কায় ছিলেন। তবে মৌসুম শেষে এখন অনেকটাই চিন্তামুক্ত কৃষকেরা। অনেক কৃষকের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন হয়েছে। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমি কৃষি অফিসের সরবরাহকৃত উন্নত জাতের সরিষা চাষ করেছি। তাই আবাদের শুরুতে যে বৃষ্টি হয়েছিল তাতে তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে যাঁরা দেশি জাতের সরিষা চাষ করেছে, তাঁরা আশানুরূপ ফলন পাননি।’
বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানই গ্রামের হাবেল মাদবর বলেন, এ বছর কিছু জমিতে ফসল ভালো হচ্ছে আর কিছু জমিতে কম হচ্ছে, সব মিলিয়ে গতবারের তুলনায় এ বছর ফলন কিছুটা কম হবে। তবে ঘন কুয়াশা ও প্রচণ্ড শীত থাকলেও সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ৪ মেট্রিক টন ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া এখানকার মাটি সরিষা আবাদের জন্য বেশ উপযোগী।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. জেরিন আহমেদ জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ১১০০ কৃষকের মাঝে কৃষি উপকরণ, উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বীজ ও রাসায়নিক সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল। এ বছর উপজেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ১৯ দশমিক ২০ হেক্টর ধরা হয়েছিল। সরিষা চাষ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের তুলনায় ১৫ হেক্টর বেশি আবাদ হয়েছে। তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে অর্ধেকের বেশি সরিষা ওঠানো হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি ওঠানো হবে। কৃষি বিভাগ থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।