খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় হাতিটানা নদীর জায়গা দখল করে পোলট্রি খামারসহ অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এ খামারের দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। প্রতিকার চেয়ে তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
লিখিত আবেদন ও একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশ স্বাধীনের আগে হাতিটানা নদীর মুখে সালতা নদীর মোহনায় বাঁধ দেয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি নিষ্কাশনের জন্য বিকল্প হিসেবে সেই থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে বাইলহারা স্লুইসগেট। কিন্তু উপজেলার মাদারতলা বাজার থেকে শুরু করে ব্রহ্মারবেড়, ঝরঝরিয়া, শুকুরমারী ও কোড়াকাটা পর্যন্ত নদীর দুই পাশ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে নানা স্থাপনা।
সম্প্রতি মাগুরখালী ইউনিয়নের শুকুরমারী এলাকার বিমল কৃষ্ণ মণ্ডলের ছেলে কৃষ্ণপদ মণ্ডল হাতিটানা নদীর তীরে খাসজমি ভরাট করে দুটি পোলট্রি ফার্মের ঘর নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছেন।
স্থানীয় ভৈরব মণ্ডল, গৌরাঙ্গ মণ্ডল, পরিমল মণ্ডলসহ অনেকেই জানান, প্রায় এক বিঘা নদীর জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে সেখানে একাধিক পোলট্রি খামার গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালীরা। এতে একদিকে রাস্তা দিয়ে চলাচলে যেমন দুর্গন্ধ ছড়াবে, অন্যদিকে পানি নিষ্কাশনে বাধা হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে।
এ ছাড়া ফার্মের কাছেই একটি কালীমন্দির থাকায় মা-বোনদের পূজা-অর্চনায় নাকেমুখে কাপড় দিয়ে আসা লাগবে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। কৃষ্ণপদ মণ্ডল ছাড়াও এলাকার বসুন সানা, বিশ্বজিৎ মিস্ত্রিসহ অনেকেই নদী দখল করে স্থাপনা তৈরি করেছেন।
এ বিষয়ে কৃষ্ণপদ মণ্ডল বলেন, ‘নদীর জায়গা দখল করেছি ঠিক, তবে সরকার যাদের বন্দোবস্ত দিয়েছে, তাদের হারি দিয়ে সেখানে পোলট্রি খামার করছি। সরকার যদি নদী খনন করে তখন আমার খামার সরিয়ে নেব।’
এ বিষয়ে স্থানীয় শিবপদ গাইন বলেন, ‘বর্ষাকালে আমাদের উঠান তলিয়ে যায়। নদী দিয়ে পানি সরে যাওয়ার কায়দা নেই দখলদারদের কারণে। আমরা চাই অবৈধ দখলমুক্তসহ নদীটি খনন করা হোক। তাহলে অন্তত ডোবার হাত থেকে বাঁচতে পারব।’
শিক্ষক অমরেন্দু মণ্ডল বলেন, অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়েছে হাতিটানা নদী। এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একটাই পথ এই নদী। বর্তমানে এক পাশে নদীটি সিলটেড হয়ে পড়েছে। আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দখলে মেতে উঠেছে কিছু অসাধু মানুষ।
এ প্রসঙ্গে মাগুরখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানা বলেন, সালতা ও হাতিটানা নদী সিলটেড হয়ে যাওয়ায় এবং নদী অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ায় বর্ষা মৌসুমে এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অবিলম্বে এসব দখল মুক্ত করে নদী খনন একান্ত জরুরি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ আসিফ রহমান বলেন, ‘আবেদন পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে হাতিটানা নদীর জায়গায় অবৈধ স্থাপনাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’