হোম > ছাপা সংস্করণ

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধান চ্যালেঞ্জ শিক্ষাজট নিরসন

রবিউল আলম, ঢাকা

২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি স্নাতক প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর মধ্য দিয়ে উচ্চশিক্ষায় পা রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসাইন। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরে চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি শেষ করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু বছর শেষ হতে চললেও এখনো চূড়ান্ত বর্ষ শুরুই করতে পারেননি ফরহাদ। এ কারণে ঠিক সময়ে চাকরির আবেদনও করতে পারছেন না তিনি।

এ সমস্যা শুধু ফরহাদ বা তাঁর সহপাঠীদের নয়। করোনার কারণে এমন জটের শিকার দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজকের পত্রিকাকে ফরহাদ বলেন, ‘যেই বয়সে স্নাতক শেষ করে চাকরির আবেদন করার কথা, সে সময়ে সবেমাত্র তৃতীয় বর্ষ শেষ করেছি। সামনে এখনো দুইটা সেমিস্টার বাকি আছে। সামনের প্রতিটা দিনই আমার জন্য এক প্রকার লস। এখন যদি আগের নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয় ছয় মাস সময় নিয়ে প্রতি সেমিস্টার শেষ করে, তাহলে আমার জীবন থেকে একটা বছর হারিয়ে যাবে।’

আগামী বছরের মধ্যে স্নাতক শেষ করার কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাদেকুর রহমান সানির। অথচ এ শিক্ষার্থীর এখনো চার সেমিস্টার বাকি। সে হিসাবে জট থেকে মুক্তি পেতে প্রতি তিন মাস অন্তর এক সেমিস্টার শেষ করতে হবে তাঁকে। যদিও ইতিমধ্যে ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করার পরিকল্পনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ নিয়মে স্নাতক শেষ হলেও এই শিক্ষার্থীকে ছয় মাস জটে পড়তে হবে।

এই তো কেবল করোনার আগে জটমুক্ত থাকা বিভাগগুলোর চিত্র। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যেসব বিভাগে করোনার আগ থেকেই এক থেকে দেড় বছরের জট ছিল, তাদের অবস্থা আরও করুণ। সেসব বিভাগের অনেক শিক্ষার্থীর ২০১৯ সালে স্নাতক শেষ করার কথা থাকলেও এখনো তাঁরা চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষাতেই বসতে পারেননি। যেমন—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি, এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স, মেরিন

সায়েন্সেস, ফিশারিজ, ওশানোগ্রাফি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগসহ অনেক বিভাগই সাড়ে ছয় বছরেও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের হাতে স্নাতকের সনদ তুলে দিতে পারেনি। এই শিক্ষাবর্ষের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মনে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ভর করেছে। তাঁরা এখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে মরিয়া।

যেসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা শেষে এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ব্যস্ত আছেন তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার আগেই তাঁরা এক বছর পিছিয়ে গেছেন। অন্যান্য বছরে জানুয়ারির প্রথমদিকে শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও এ বছর ডিসেম্বরে এসেও তাঁরা এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু করতে পারেননি। কত দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন, সেই চিন্তায় আছেন তাঁরা।

খোলার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে, সে জন্য গত ২২ জুন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি রিকভারি গাইডলাইন পাঠিয়েছে বাংলাদেশ মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এই গাইডলাইনে শিক্ষাবর্ষের সময় কমানো, বিভিন্ন ধরনের ছুটি বাতিলসহ ছয়টি বিষয় যুক্ত করা হয়। এ ছাড়া বিদ্যমান একাডেমিক ক্যালেন্ডারের সময়কাল উল্লেখযোগ্য ও গ্রহণযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা, ক্লাসের ব্যাপ্তি না কমিয়ে ক্লাসের সংখ্যা বাড়িয়ে অল্প সময়ে পুরো সিলেবাসের পাঠদান সম্পন্ন করা এবং প্রচলিত সময়ের চেয়ে কম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি পরিহার করতেও বলা হয়।

কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির এ পরামর্শ মাথায় রেখে সেমিস্টারের সময় এবং বিভিন্ন ছুটি কমালেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ছয় মাস ফেরিয়ে গেলেও এখনো শিক্ষাজট নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন যেসব পরীক্ষা এত দিন আটকে ছিল আপাতত সেগুলো সম্পন্ন করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দিলেও এখনো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এ নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। যার ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন।

করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রিকভারি পরিকল্পনা না মানাকে দুর্ভাগ্যজনক বলেছে ইউজিসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির অতিরিক্ত সচিব অধ্যাপক ড. ফেরদৌস জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় যে এখনো করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রিকভারি গাইডলাইন অনুযায়ী উদ্যোগ নিচ্ছে না বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। দেড় বছর সময়মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস হয়নি। আমরা আমাদের শিক্ষার্থী এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েই গাইডলাইনটি তৈরি করেছি। তখন সব বিশ্ববিদ্যালয় সাধুবাদ জানিয়েছে যে তারা এটা অনুসরণ করবে। এখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি এটা না মানে, তাহলে সেটা দুর্ভাগ্যজনক। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে রিকভারি গাইডলাইন অনুসরণের আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ