হোম > ছাপা সংস্করণ

রানি বেচে রাজার হালে

গোলাম তোফাজ্জল কবীর মিলন বাঘা (রাজশাহী)

বেসরকারি সংস্থার ছোট চাকরি, বেতন কম। তাই পোষাচ্ছিল না। চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাবার সঙ্গে নেমে পড়েন মৌ চাষে। সেটা ২০ বছর আগের কথা। মধু আহরণের সঙ্গে দিনে দিনে রপ্ত করেন রানি মৌমাছি উৎপাদন ও প্রতিপালনের কৌশল। এখন তিনি বছরে যত টাকার মধু বিক্রি করেন তার চেয়ে বেশি আয় তাঁর রানি মৌমাছি বেচে। এতে জায়গাজমি, পাকা বাড়িঘর করেছেন তিনি। বলা যায়, রানি বেচে রাজার হালে আছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা গ্রামের মাসুদ রানা মধু।

মাসুদ রানার এই কাজের অন্যতম সহযোগী তাঁর ভাই রাজীব হাসান। দুই ভাইয়ের অবস্থান এখন পাবনার চাটমোহর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে। সেখানে মাঠে কালিজিরার ফুল ফুটেছে। সেই মধু সংগ্রহে মাঠে মৌ-বাক্স বসিয়েছেন দুই ভাই।

মৌমাছির জীবনচক্রের মজার কাহিনি জানালেন মাসুদ রানা। তিনি বলেন, রানি আকারে সবার চেয়ে বড়। তার গায়ের রং আলাদা। পুরুষ তার চেয়ে ছোট। তারও গায়ের রং আলাদা। আকারে সবচেয়ে ছোট শ্রমিক। তাদেরও গায়ের রং আলাদা। দেখেই চেনা যায়। একটি মৌচাকে এক রানির শাসন। একের অধিক রানি জন্মালে শ্রমিকেরা অন্যদের হুল ফুটিয়ে মেরে ফেলে। শ্রমিকেরা মধু আহরণ, খাদ্য জোগাড়, বাচ্চা প্রতিপালন, ডিম দেওয়ার প্রকোষ্ঠ তৈরি ও রানির পাহারায় থাকার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে। তারা বাক্সের মুখে পাহারায় থাকে। অন্য বাক্সের মাছি সেখানে ঢোকার চেষ্টা করলে পাহারাদার শ্রমিকেরা তাকে হুল ফুটিয়ে মেরে ফেলে। পুরুষ মাছিরা প্রজনন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় আর অলস সময় কাটায়। মিলনের সময় রানি আকাশে ওড়ে। শ্রমিকেরা চারিদিকে তার পাহারায় থাকে। কারণ, রানি আকারে বড় হয়। তাকে পাখিতে ধরে খেয়ে ফেলতে পারে। একটি পুরুষ মাছি শুধু মিলনের সুযোগ পায়। তারপর সে মারা যায়। মাছির এই জীবনচক্র নিয়ে গবেষণা থেকে কৃত্রিম উপায়ে রানি তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। মাসুদ রানা ও রাজীব নিজেরাই এখন এটা করতে পারেন।

মাসুদ রানা জানান, প্রাকৃতিক উপায়ে একটি রানি মাছির ডিম ফোটে ১৫-১৬ দিনে। কিন্তু কৃত্রিম উপায়ে করলে ১১ দিনেই হয়। এই পদ্ধতিকে ‘গ্রাফটিং’ বলে। ‘গ্রাফটিং’ পদ্ধতিতে অল্প সময়ে বেশি রানি উৎপাদন করা যায়। তবে কৃত্রিম উপায়ে রানি বড় ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। তার প্রজনন ক্ষমতা বেশি হয়। একটি মৌচাকে একটিমাত্র রানি, কিছু পুরুষ ও একদল শ্রমিক মাছি থাকে। একটি রানি, কিছু পুরুষ ও একদল শ্রমিকসহ একটি বড় মৌ-বাক্স তিনি বিক্রি করেন ৬ হাজার টাকায়। বাক্স একটু ছোট হলে দাম ৪ হাজার ৩০০ টাকা।

পাঁচ বছর ধরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মৌচাষিদের কাছে রানি সরবরাহ করছেন মাসুদ রানা। চলতি বছরে বাঘা উপজেলা কৃষি দপ্তরে ৯টি, চারঘাট উপজেলা কৃষি দপ্তরে ৮টি, পবা উপজেলা কৃষি দপ্তরে ৯টি ও কিশোরগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলার কৃষি দপ্তরে ৯টি করে ৪৫টি মৌ-বাক্স বিক্রি করেছেন। এ ছাড়া দুইজন নতুন খামারি ৭০টি রানিসহ ৪০০ মৌ-বাক্স কিনেছেন। সব মিলে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মৌ-বাক্স বিক্রি করেছেন। প্রতি মৌসুমে গড়ে প্রায় ১০০ মণ মধু আহরণ করছেন। সেখান থেকে প্রতি বছর আয় ৩ লাখ টাকা।

বাঘা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, মৌচাষি মাসুদের কাছ থেকে আধুনিক ৯টি মৌ-বাক্স ও মৌ-কলোনি কিনে উপজেলার মৌচাষিদের দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে তাঁদের মৌ চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

মাসুদ-রাজীব দুই ভাইয়ের তিন মেয়ে। তাঁদের ছয় কক্ষবিশিষ্ট বাড়ি। দুই কক্ষবিশিষ্ট রান্নাঘর। সবই সেমিপাকা। সব মিলিয়ে তাঁদের সুখের সংসার এক রানির কল্যাণে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ